Coronavirus

‘বেচাল’ দেখলে পুলিশকে খবর দিচ্ছেন মানুষ

রাত ২ টো নাগাদ বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পান। বাসিন্দারা খবর দেন, বিদেশে থেকে বাগদার এক ব্যক্তি গ্রামে ফিরেছেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০৭:৩৯
Share:

ফাইল চিত্র

রাত সাড়ে ১২টায় ফোন ধরলেন বনগাঁ থানার আইসি মানস চৌধুরী। উদ্বিগ্ন গলায় একজন বললেন, ‘‘আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি কাতারে ছিলেন। বাড়ি ফিরেছেন। ভয়ে আমদের ঘুম হচ্ছে না। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন কিনা বুঝতে পারছি না।’’ আইসি আশ্বস্ত করেন, খোঁজ নিয়ে দেখবেন। রাতেই পুলিশ যায় ওই ব্যক্তির বাড়িতে। খালি চোখে কোনও লক্ষণ চোখে পড়েনি। আইসি ওই ব্যক্তিকে জানান, ১৪ দিন বাড়িতেই থাকবেন। ঘরের বাইরে বেরোবেন না। অসুস্থ হলে চিকিৎসককে দেখাবেন। বাসিন্দাদের পুলিশ ভরসা দিয়ে বলে, অযথা আতঙ্কিত হবেন না। পরিবারটির উপরে নজর রাখুন। ঘরের বাইরে বেরোতে দেখলে পুলিশকে খবর দেবেন।

Advertisement

রাত ২ টো নাগাদ বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পান। বাসিন্দারা খবর দেন, বিদেশে থেকে বাগদার এক ব্যক্তি গ্রামে ফিরেছেন। তাঁর নাকি জ্বর রয়েছে। সেই রাতেই মহকুমাশাসক বাড়িতে স্বাস্থ্য কর্মীদের পাঠান। বনগাঁ মহকুমার অনেক মানুষই কর্মসূত্রে ভিনরাজ্য বা বিদেশে যান। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তেই তাঁরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। রাজ্যে যে চারজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তাঁদের মধ্যে তিনজনই বিদেশ থেকে ফিরেছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই বিদেশ থেকে আসা বা ভিনরাজ্য থেকে বাড়ি ফেরা মানুষজনকে নিয়ে পাড়াপড়শিরা সজাগ। বাইরে থেকে কেউ ফিরেছেন জানতে পারলেই তাঁরা সেই খবর পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশ-প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এমনকী সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে। ফিরে আসা ব্যক্তির জ্বর সর্দিকাশি হচ্ছে কিনা, সে বিষয়েও লোকজন খবর রাখছেন। বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে কেউ এলাকায় বের হলেই পড়শিরা তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছেন, তিনি যেন ১৪ দিন ঘরের বাইরে না বেরোন। অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। সাম্প্রতিক সময়ে আরব দেশগুলি ছাড়াও ইটালি, আমেরিকা থাকা লোকজন ফিরে এসেছেন। প্রশাসনের তরফে তাঁদের উপরে নজর রাখা হচ্ছে। মহকুমাশাসকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মী গিয়েছিলেন ওষুধ কিনতে। দোকানি সেই কর্মীর হাতে চিরকুটে একটি নাম লিখে মহকুমাশাসককে পাঠান। চিরকুটে নাম লেখা ব্যক্তিটি বিদেশ থেকে ফিরেছিলেন। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা রাতভর মানুষের ফোন ধরতে ধরতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। এক পুলিশ কর্তা বলছিলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা প্রায় ১৫০টি ফোন এসেছে।’’ সকলেরই বক্তব্য, তাঁদের এলাকায় বাইরে থাকা ব্যক্তি ঘরে ফিরেছেন। বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ এমন ফোন পেয়ে প্রায় ১৫টি বাড়িতে খোঁজ নিতে গিয়েছেন। বাইরে থেকে আসা ব্যক্তির পরিবারকে চাল-ডাল কিনে দিয়েছেন।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিনরাজ্য বা বিদেশ থেকে ফেরা মানুষজনের খবর জানতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে ব্লকভিত্তিক হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ওসি, আইসি, বিডিও, বিএমওএইচ, স্বাস্থ্যকর্মী, মহকুমাশাসক, জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন। যে কোনও সূত্রে কেউ কোনও খবর পেলেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানিয়ে দিচ্ছেন।

Advertisement

মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘বিদেশ থেকে বা ভিন রাজ্য থেকে কেউ ফিরেছেন জানতে পারলেই সেই বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ১৪ দিন তাঁকে বাড়ির বাইরে না বেরোতে বলা হচ্ছে। খাওয়া, স্নান, টয়লেট সব আলাদা করতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। বাইরে থেকে ফেরা কোনও ব্যক্তির যদি বেশি অসুস্থতা থাকে, তাঁকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে। গোটা প্রক্রিয়ায় পুলিশ ও পঞ্চায়েত সাহায্য করছে।’’ মানুষটি যাতে বাড়ির বাইরে বের না হন, তা নিশ্চিত করতে নজরদারি রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বাইরে থেকে ফিরে আসা ১৫০ জন মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল। চিকিৎসকেরা অবশ্য কাউকে ভর্তি করার প্রয়োজন মনে করেননি। মানুষের সচেতনতা নিয়ে খুশি পুলিশ-প্রশাসন। কাকলি বলেন, ‘‘মানুষ সচেতন হচ্ছেন। তাঁরা আমাদের খবর দিচ্ছেন। তবে এটাও দেখতে হবে, ঘরে ফেরা মানুষের উপরে কোনও মানসিক চাপ তৈরি না হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন