নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেলেন অনেকে

এ দিন সকালে হাসনাবাদে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে এনডিআরএফ-এর দল স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন। আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৯ ০০:২৬
Share:

সুনসান: বসিরহাটের পথঘাট

শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। বুলবুল আছড়ে পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় তটস্থ উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন-লাগোয়া প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ। টানা বৃষ্টিতে সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায় অনেক মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। শনিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনমানবশূন্য।

Advertisement

এ দিন সকালে হাসনাবাদে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে এনডিআরএফ-এর দল স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন। আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ঝড়বৃষ্টি নিয়ে কোনও রকম গুজবে কান দিতে বারণ করা হচ্ছে। বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় তদারকি করছিলেন। বললেন, ‘‘বুলবুলের মোকাবিলায় পানীয় জল, ওষুধ, খাবার মজুত করা হয়েছে। প্রস্তুত উদ্ধারকারী দল। ২০টি স্কুল, ৬টি বহুমুখী সাইক্লোন সেন্টার, ৮টি ফ্লাড সেন্টার খুলে রাখা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে নদীপথে উদ্ধার কাজের জন্য বেশ কয়েকটি লঞ্চ, স্পিড বোট, যন্ত্রচালিত নৌকো তৈরি রাখা হয়েছে।’’ বিডিও জানালেন, এখান থেকেই ৫টি ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত ও ত্রাণ শিবিরে পানীয় জল সরবরাহ করবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। সে জন্য জোরকদমে মেশিনে জলের পাউচ তৈরি করা হচ্ছে।

একটু এগিয়ে বনবিবি সেতু পেরিয়ে হিঙ্গলগঞ্জ। সেখানেও বুলবুলের আশঙ্কায় মানুষ। আয়লার অভিজ্ঞতা এখনও ভোলেননি এঁরা। ফলে আতঙ্ক আরও জাঁকিয়ে বসেছে। ফের ভিটেমাটি ছাড়া হতে হবে না তো, ঘুরছে সেই প্রশ্ন। টিভির পর্দায় চোখ রেখেছেন অনেকে। কানে কানে ঘুরছে রেডিয়ো।

Advertisement

হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও সৌম্য ঘোষ, পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সুদীপ মণ্ডল, থানার ওসি সিদ্ধার্থ মণ্ডলকে দেখা গেল, ফেরিঘাট এবং পঞ্চায়েত এলাকা ঘুরে দেখছেন। সুদীপ বলেন, ‘‘ফেরি পারাপার বন্ধ থাকায় কিছু মানুষ দুলদুলির ঘাটে আটকে পড়েছেন। তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধানের তত্ত্বাবধানে বিপজ্জনক এবং দুর্গম এলাকার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসা হচ্ছে। শিবিরগুলিতে বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।’’

হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল সকাল থেকেই এলাকায় ঘুরছিলেন। দুলদুলি ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা গেল, এক অন্তঃসত্ত্বা নদী পার হতে পারছেন না। বিধায়ক তাঁকে নিজের গাড়িতে ভেসেল পার করিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। দেবেশ বলেন, ‘‘আয়লার ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখে আমরা এ বার আগাম সতর্কতা নিয়েছি। স্কুল, ফ্লাড সেন্টার এবং বহুমুখী সাইক্লোন সেন্টার খুলে রাখা হয়েছে।’’

বসিরহাটের মহকুমাশাসক বিবেক ভাসমে জানিয়েছেন, মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকেই ৩৫ হাজার মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা হয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘৫টি ব্লকে ১৬টি বহুমুখী সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, স্কুলগুলিতে মানুষ যাতে আশ্রয় নিতে পারেন, তারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল, ওষুধ, ত্রিপল মজুত আছে ব্লকগুলিতে।’’

আয়লায় বসিরহাট মহকুমায় সব থেকে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ক্ষতি হয়েছিল প্রচুর সম্পত্তির। এ বার বিপর্যয়ের আশঙ্কায় সুন্দরবন ঘেঁষা হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি ১ ও ২, মিনাখাঁ ব্লকের প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের স্বেচ্ছাসেবকেরা গ্রামে গিয়ে নদীর পাশ থেকে মানুষকে সরানোর কাজ করছেন। শুক্রবার থেকেই বসিরহাট মহকুমার ইছামতী, কালিন্দী, ডাঁসা, রায়মঙ্গল, গৌড়েশ্বর, কলাগাছি, বিদ্যাধরী নদী উত্তাল। নদীর পাড় থেকে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন