কামারহাটি, বরাহনগর

‘এ বার যান, আমাদের কাজ একটু বাকি’

তিনি এলাকায় নেই ঠিকই, কিন্তু তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা তো রয়েছেন। তাঁরাই বা কম কীসে! তিনি কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী মদন মিত্র। গত লোকসভা ভোটেও নিজেই বড় গাড়ি হাঁকিয়ে এলাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ‘ভোট নিয়ন্ত্রণ’ করেছিলেন। আর তাঁর গাড়ির পিছনে সার দিয়ে ছিল মোটরসাইকেল বাহিনী। শনিবার কামারহাটির পুরভোটের দিনও অবশ্য সেই চিত্রের তেমন পরিবর্তন হয়নি।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৪
Share:

তিনি এলাকায় নেই ঠিকই, কিন্তু তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা তো রয়েছেন। তাঁরাই বা কম কীসে!

Advertisement

তিনি কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী মদন মিত্র। গত লোকসভা ভোটেও নিজেই বড় গাড়ি হাঁকিয়ে এলাকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ‘ভোট নিয়ন্ত্রণ’ করেছিলেন। আর তাঁর গাড়ির পিছনে সার দিয়ে ছিল মোটরসাইকেল বাহিনী।
শনিবার কামারহাটির পুরভোটের দিনও অবশ্য সেই চিত্রের তেমন পরিবর্তন হয়নি। তফাৎ একটাই, এ বার তিনি নেই সশরীরে।

কামারহাটি পুরসভার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের সামনে এ দিন সকাল থেকে স্থানীয়দের পাশাপাশি ভিড় জমে ওঠে বহিরাগত যুবকদের। ছিল প্রমীলা-বাহিনীও। এখানেই শেষ নয়। সকাল থেকে দুপুর— আড়িয়াদহ থেকে বেলঘরিয়া জুড়ে ভোটকেন্দ্রের বাইরে কখনও মোটরবাইক তো কখনও গাড়িতে চেপে ঘুরতে দেখা গিয়েছে অসংখ্য যুবককে।

Advertisement

সকাল আটটায় প্রথম খবর আসে বেলঘরিয়ার প্রবর্তক বিদ্যাপীঠে ছাপ্পা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। খবর পেয়েই কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে পানিহাটির বাসিন্দা তিন যুবককে আটক করে। কিন্তু পানিহাটির ওই যুবকেরা বেলঘরিয়ায় কী করছেন জানতে চাইতেই বুকে শাসক দলের ব্যাচ ঝোলানো এক যুবক বলে ওঠেন, ‘‘সাংবাদিক দাদারা, এ বার দয়া করে অন্য দিকে যান।’’

অগত্যা ওই বুথ ছেড়ে বিটি রোডের দিকে আসতেই দেখা মিলল ‘জঙ্গল’ ঘেরা এক ভোটকেন্দ্রের। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ‘উদয় ভিলা’ নামে ওই ভোটকেন্দ্রের ভিতরে যাওয়ার মূল গেটই ছিল বন্ধ। যা দেখে ঘাবড়ে যান ভোটারেরা। কিন্তু শেষমেশ রাস্তার ধারে ক্যাম্প করে বসে থাকা তৃণমূলকর্মীরাই বাড়ির পিছনের ঝোপজঙ্গল ভরা রাস্তা দিয়ে ভিতরে নিয়ে যান ভোটারদের। কিন্তু ভোটকেন্দ্রের মূল গেট বন্ধ কেন? একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে কর্মীরা বললেন, ‘‘দাদা বলেছেন!’’

সকাল থেকে এলাকায় মোটরবাইক নিয়ে ঘুরে রক্তচক্ষু দেখিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি শাসকদলের কর্মীরা। অনেকাংশে নিজেদের ভোটারদেরও বিশ্বাস করতে চায়নি তৃণমূল। ফলে ভোট দিতে এসে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে অনেককে। এ দিন খড়দহের এক নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কর্মী কৃষ্ণ পালকে বিরোধীরা মারধর করেন বলে অভিযোগ। বিরোধীরাও মারধরের পাল্টা অভিযোগ করেছেন।

কামারহাটির মতো এ দিন বরাহনগর ও খড়দহেও তৃণমূল এবং সিপিএম ছাড়া অন্য কোনও দলের ক্যাম্প অফিস কিংবা প্রার্থীদের ঘোরাফেরা তেমন ভাবে চোখে পড়েনি। তবে এ দিন বরাহনগরে কিছুটা হলেও লড়াই দিয়েছেন নির্দল প্রার্থীদের একাংশ।

এ দিন সকালে ভূমিকম্প শুরু হতেই বরাহনগর, কামারহাটির কয়েকটি বুথ থেকে ভোটার ও কর্মীরা ভয়ে সরে যান। বন্ধ করে দিতে হয় বরাহনগর-কামারহাটি যৌথ জলপ্রকল্প প্রকল্পের দোতলার একটি বুথ।

দুপুরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হতেই অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রের সামনে ভিড় পাতলা হতে শুরু করে। শেষ কয়েক জন আবার ছাতা মাথা দিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পৌনে তিনটে নাগাদ খড়দহের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কল্যাণনগর মাঠপাড়ার একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে দাঁড়াতেই বৃষ্টি ভেজা এক দল যুবক বাইরে এসে বললেন, ‘‘এ বার তো যান। আর একটুখানি কাজ বাকি। প্লিজ।’’

বন্ধ দরজার ভিতর থেকে আওয়াজ আসছে ‘পিক পিক!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন