গোবরডাঙার জমিদার বাড়ির পুজো।
জমিদারি ও অতীত জৌলুস নেই। তবু ঐতিহ্য ও আভিজাত্যে আজও উজ্জ্বল গোবরডাঙার মুখোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গা পুজো।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পুজোর বয়স ৩০০ বছরেরও বেশি। খেলারাম মুখোপাধ্যায় গোরবডাঙায় পুজো শুরু করেন। বাংলাদেশের সাগরদাঁড়ি থেকে এসে তিনি স্থানীয় ইছাপুরের জমিদার চৌধুরী পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন। সেই সূত্রে তিনি জমিদারির একাংশ পান। অতীতে পুজোতে মোষবলি ও পাঁঠাবলি দেওয়া হত। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তার পরিবর্তে পাঁচ পোয়া চিনি ও এক পোয়া মধু দেওয়া হয় দেবী দুর্গাকে। জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজো হয়। এখানকার দুর্গা প্রসন্নময়ী দুর্গা নামে পরিচিত। জমিদার বাড়ির কাছে প্রসন্নময়ী কালীমন্দির। প্রতিপদে ওই কালী মন্দিরে ঘট স্থাপন করা হয়। সপ্তমীর দিন ওই ঘট আনা হয় জমিদার বাড়িতে। প্রতিমা একচালার।
অতীতে জমিদার বাড়ি থেকে যমুনার ঘাট পর্যন্ত মানুষ বিসর্জনের শোভাযাত্রায় সামিল হতেন। থাকত হাতি। দশমীর দিন সন্ধ্যায় আকাশে একটি তারা দেখা গেলেই যমুনাতে প্রতিমা বিসর্জন হয়। এই রীতি এখনও মানা হয় বলে জানান পরিবারের লোকেরা। পরিবারের বংশধর স্বপন প্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অতীতে আমাদের পুজোতে ষষ্ঠীর দিন কামান দাগা হত। সেই আওয়াজে মানুষ জানতে পারতেন পুজো এসে গিয়েছে। মানুষও পুজোর প্রস্তুতি শুরু করতেন।’’ আগে পুজোর দিনগুলিতে যাত্রা পালার আয়োজন হত। তা আর হয় না। কিন্তু তবু গোরবডাঙার মানুষ আজও পুজোর একটি দিন এখানে ভিড় করেন।
ইছাপুরে চৌধুরী বাড়ির প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
গাইঘাটার ইছাপুরে চৌধুরীদের ৪০০ বছরেরও বেশি পুরনো পুজো। ভোগ খাওয়া অঞ্জলি দেওয়া সবেতেই গ্রামবাসীদের উৎসাহ চোখে পড়ে। বৈষ্ণব ধর্মশাস্ত্রের বিশিষ্ট পণ্ডিত রাঘব সিদ্ধান্ত বাগীশ ইছাপুরে চৌধুরী জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। পরিবার সূত্রে জানা যায়, চৌধুরী পদবী তাঁরা পেয়েছিলেন সম্রাট আকবরের কাছ থেকে। চৌধুরী বংশের সদস্য দুর্গাদাস চৌধুরী বলেন, ‘‘রাঘব সিদ্ধান্ত বাগীশ ইছাপুরে দুর্গা পুজোর সূচনা করেন। তিনি রাজা প্রতাপাদিত্যের সমসাময়িক ছিলেন।’’ তারপর থেকে চলে আসছে পুজো। এই পুজোয় কলা বউ, সন্ধিপুজো, কুমারীপুজো হয় না। পুজো এখানে চলে ন’দিন। প্রথমে ঘটপুজো। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন। সপ্তমীতে দেবীকে বেদীতে তোলা হয়। দশমীর দিন যমুনা নদীতে দেবীর বিসর্জন হয়। দুর্গাদাসবাবু জানান, অতীতে পুজোতে ১০১টি পাঁঠা বলি দেওয়া হত। এখন আর তা হয় না। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা জীব হত্যা পছন্দ করি না।’’ এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাত জেগে ঠাকুর দেখতে গেলেও চৌধুরী বাড়ির পুজো দেখতে যাওয়া হয়ই। ওখানে না গেলে পুজো অসম্পূর্ণ মনে হয়।