নকলের কারবারে ছেয়েছে দত্তপুকুর

উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত সংলগ্ন এলাকার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই চলছে এমন অসাধু ব্যবসা। পুলিশ এবং এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ (দুর্নীতি-দমন শাখা) হানা দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু অভিযোগ, ফের ‘অদৃশ্য’ ক্ষমতাবলে ভোল পাল্টে চালু হয়ে যাচ্ছে নকল সামগ্রী তৈরির ব্যবসা।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৫৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

কোথাও সাদামাটা দোতলা বাড়ি। কোথাও আবার উঁচু পাঁচিলের ভিতরে বিশাল কারখানা। বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই। কোথাও বোতলবন্দি হচ্ছে পানীয়
জল, কোথাও তৈরি হচ্ছে ওষুধ, কোথাও নামী সংস্থার প্রসাধনী, কোথাও বা সিমেন্ট। এ সমস্ত পণ্যের মধ্যে মিল একটাই। সবগুলিই নকল। শুধু তা-ই নয়, নামী সংস্থার দুধের গাড়ি ভিতরে ঢুকিয়ে সেই দুধেও মেশানো হচ্ছে জল।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত সংলগ্ন এলাকার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই চলছে এমন অসাধু ব্যবসা। পুলিশ এবং এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ (দুর্নীতি-দমন শাখা) হানা দিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু অভিযোগ, ফের ‘অদৃশ্য’ ক্ষমতাবলে ভোল পাল্টে চালু হয়ে যাচ্ছে নকল সামগ্রী তৈরির ব্যবসা।

বারাসতের শেষ প্রান্ত দত্তপুকুর থানা এলাকাকেই এই কাজের জন্য বেছে নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। গত ১৪ অগস্ট দত্তপুকুর থানার বাঁকপুলের একটি বাড়ি থেকে একটি নামী ওষুধ ও প্রসাধনী সংস্থার নকল লেবেল ও সিরাপ উদ্ধার করে দুর্নীতি-দমন শাখা। গুদাম থেকে উদ্ধার হয় নকল জিনিস তৈরির সরঞ্জামও। মূলত নকল সিরাপ বোতলে ভরে নামী কোম্পানির লেবেল সেঁটে দেওয়া হত ওই কারখানায়।

Advertisement

তবে বাড়িওয়ালা বা ব্যবসায়ীদের কেউ ধরা পড়েনি। সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রসাধনীর পাশাপাশি নামী সংস্থার লেবেল সেঁটে নকল চ্যবনপ্রাশ, মধু এবং জীবনদায়ী ওষুধও তৈরি হত এই কারখানায়। যা শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারী অফিসারেরাই।

সম্প্রতি দত্তপুকুরেই নকল সিমেন্ট তৈরির একটি কারখানা সিল করে দেওয়া হয়। আবার দেখা যায়, ওই থানা এলাকারই একটি জায়গায় দুধের গাড়ি ঢুকিয়ে দুধ নামিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তার পরে তাতে মেশানো হচ্ছে জল। নামিয়ে নেওয়া বাড়তি দুধ অন্য ব্যারেলে ভরে চালান হয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, দত্তপুকুরের একটি কারখানায় নিম্ন পানের পানীয় জল বোতলে ভরে তা বাজারে বিক্রি করা হত। মাসখানেক আগে ওই এলাকা থেকেই ধরা হয় প্রচুর নিম্ন মানের জলের বোতলও। গ্রেফতার করা হয় কারখানার মালিককে। সিল করে দেওয়া হয় কারখানাটিও। তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, পানীয় জল তৈরি ও তা বোতলে ভরে বেচার জন্য যে সব অনুমতি প্রয়োজন, তা ছিল না কর্তৃপক্ষের। সেই জল পরীক্ষা করে জানা যায়, তাতে জীবাণু ভর্তি। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ওই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করে কারখানাটি সিল করে দেওয়া হয়। এ রকম নকল কারখানার খবর পেলেই ধরা হচ্ছে।’’

কিন্তু কলকাতার এত কাছে পুলিশের নজর এড়িয়ে দিনের পর দিন কী ভাবে চলছে নকল তৈরির কারখানা? অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘পুলিশি নজরদারিতে ধরাও পড়েছে এমন কারখানা। দুর্নীতি-দমন শাখাও হানা দিয়ে বেশ কয়েকটি কারখানা সিল করেছে।’’

কিন্তু অভিযোগ, এক বার বন্ধ করে দেওয়ার পরে ফের সেই জায়গায় বা আশপাশে চালু হয়ে যাচ্ছে নকল জিনিস তৈরির ব্যবসা। আরও অভিযোগ, বিভিন্ন সরকারি দফতর এবং পুলিশকে ‘সন্তুষ্ট’ করেই রমরমিয়ে চলছে ব্যবসা। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেলা দুর্নীতি দমন শাখার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রূপান্তর সেনগুপ্ত অবশ্য বলেন, ‘‘নকল সামগ্রী তৈরির বেশ কিছু কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। টাকা নেওয়ার নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন