তেলে মিশছে বিষ, উদ্বেগ নানা মহলে

শুক্রবার বিকেলে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের কর্তারা বনগাঁর গোবরাপুর এলাকায় একটি বাড়িতে হানা দিয়ে প্রচুর টিনের ড্রাম ভর্তি সর্ষের তেল আটক করেন। 

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:১৪
Share:

বাজেয়াপ্ত: ভেজাল তেল। — নিজস্ব চিত্র 

নামী-দামি সংস্থার লোগো লাগিয়ে তার আড়ালে ভেজাল তেল যে কোথায় কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে, তার হদিস পেতে এখন মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ এবং পুলিশের। স্থানীয় সূত্রের খবর আসছে, বনগাঁর নানা প্রান্তে গোপনে ভেজাল সর্ষের তেলের কারবার চলছে। খোলা বাজারে তো বটেই পাইকারি বাজার ঘুরে যা ছড়িয়ে পড়েছে জেলার নানা প্রান্তে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশও।

Advertisement

শুক্রবার বিকেলে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের কর্তারা বনগাঁর গোবরাপুর এলাকায় একটি বাড়িতে হানা দিয়ে প্রচুর টিনের ড্রাম ভর্তি সর্ষের তেল আটক করেন।

দফতরের কর্তাদের দাবি, ওই তেল ভেজাল। সয়াবিন, পাম, রাইস তেল মেশানো রয়েছে। তেলের সঙ্গে রাসায়নিকও মেশানো হত বলে অনুমান। আরও নিশ্চিত হতে আটক করা তেলের নমুনা তাঁরা ওয়েস্ট বেঙ্গল পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরিতে পাঠাচ্ছেন।

Advertisement

ভেজাল সর্ষের তেল খেলে বা গায়ে মাখলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে?

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, নিয়মিত ভেজাল সর্ষের তেল রক্তে কোলোস্টেরল বাড়ায়। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘ভেজাল সর্ষের তেল শরীরে ঢুকলে লিভার ও কিডনি ক্ষতি করে। দীর্ঘ দিন ধরে এই তেলের ব্যবহার মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।’’

গ্রামের মুদি দোকানি বিবেক সরকারের বাড়িতে ভেজাল তেলের কারখানার হদিস পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ। বিবেককে আপাতত খুঁজছে পুলিশ। তার পরিবারের তরফে দাবি, ভেজাল কিছু মেশানো হত না তেলে। সঠিক পরীক্ষা হলেই তা প্রমাণ হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু গোবরাপুর নয়, গোটা বনগাঁ মহকুমা জুড়েই ভেজাল সর্ষের তেলের কারবার চলছে গোপনে। বহু বাড়িতে ভেজাল সর্ষের তেল তৈরির মেশিন রয়েছে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, ‘‘সর্ষের তেলের সঙ্গে তিল, পচা বাদাম মেশানো হয়। ওড়িশা থেকে এক ধরনের ফল নিয়ে আসা হয়। সে সবও মেশানো হয়।’’ ঝাঁঝ বাড়াতে নানা রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয় বলেও শোনা যাচ্ছে।

কয়েক বছর আগে গোপালনগর থানা এলাকায় একটি গাড়ি উল্টে যায়। গাড়িতে সর্ষের তেলের ড্রাম ছিল। পরবর্তী সময়ে ডিইবি কর্তারা সে সব আটক করেন। জানা যায়, ওই সর্ষের তেলেও ভেজাল ছিল। বাসিন্দারা জানালেন, এই সব ভেজাল সর্ষের তেল এখন ট্যাঙ্কারে ভর্তি করে বাইরে চলে যায়।

প্রবীণ মানুষজন অনেকেই জানালেন, ছোটবেলায় সর্ষের তেলে রান্না হলে চোখ জ্বালা করত। গায়ে তেল মাখলেও চোখে জল আসত। এখন সর্ষের তেলে সেই ঝাঁঝ-গন্ধ কমেছে। ভেজাল তেলই তার কারণ নয় তো— আশঙ্কা দানা বেঁধেছে অনেকের মনেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন