নিমতায় ঘরে আগুন, পুড়ে মৃত্যু দৃষ্টিহীন  মা ও মেয়ের

পুলিশ জানায়, নিমতার ওই ঘটনায় মৃত মা ও মেয়ের নাম স্মৃতি দাশগুপ্ত (৭৮) এবং কল্যাণী দাশগুপ্ত (৪৫)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০৩:২৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঘুপচি একটি ঘরের মধ্যেই কোনও মতে দিন কাটত শয্যাশায়ী বৃদ্ধা, তাঁর দুই মেয়ে ও এক নাতনির। পরিবারের চার জনই দৃষ্টিহীন। সোমবার গভীর রাতে আচমকা সেই ঘরে আগুন লেগে পুড়ে মৃত্যু হল ওই বৃদ্ধা ও তাঁর বড় মেয়ের। কোনও মতে বাইরে বেরিয়ে আসায় বেঁচে গিয়েছেন বৃদ্ধার ছোট মেয়ে ও ১৬ বছরের নাতনি।

Advertisement

পুলিশ জানায়, নিমতার ওই ঘটনায় মৃত মা ও মেয়ের নাম স্মৃতি দাশগুপ্ত (৭৮) এবং কল্যাণী দাশগুপ্ত (৪৫)। দক্ষিণ প্রতাপগড়ের জনবহুল এলাকায় দরমা ঘেরা, টিনের চালার ছোট একটি ঘরে তাঁদের সঙ্গে থাকতেন স্মৃতিদেবীর ছোট মেয়ে সাথী ঘোষ ও নাতনি ঝিলিক। স্থানীয় সূত্রের খবর, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ হওয়ার পর থেকে মায়ের কাছে থাকতেন সাথী। কোনও দিন চার জনের খাবার জুটত, তো কোনও দিন তা-ও ঠিক মতো জুটত না। এলাকায় খাবার ও জামাকাপড় চেয়ে চার জনের সংসার চলত। স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও তাঁদের সহযোগিতা করত। লকডাউন পরিস্থিতিতে ত্রাণও পাচ্ছিল পরিবারটি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে স্মৃতিদেবীরা চার জনে ছোট ঘরটিতেই গাদাগাদি করে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত দুটো নাগাদ বিকট শব্দ শুনে বেরিয়ে আসেন স্থানীয়েরা। তাঁরা গিয়ে দেখেন স্মৃতিদেবীদের গোটা ঘরে আগুন জ্বলছে। কোনও মতে মেয়েকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাথী। অন্য দিকে, দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা ঘরের ভিতর আটকে তখন চিৎকার করছেন কল্যাণী। কয়েক জন যুবক ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শেষে স্থানীয়েরাই জল ঢালতে শুরু করেন।

Advertisement

খবর পেয়ে দমকল ও নিমতা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তত ক্ষণে অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলেন। কোনও মতে আগুন নিভিয়ে সকলে ঘরে ঢুকে দেখেন মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন স্মৃতিদেবী ও কল্যাণী। ঘরের ভিতর বিভিন্ন জায়গায় ডাঁই হয়ে রয়েছে পোড়া জামা-কাপড়। ফেটে গিয়েছে স্টোভটিও।

কী ভাবে রাত দুটোর সময়ে ওই ঘরে আগুন লাগল, স্টোভই বা কী ভাবে ফাটল তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ব্যারাকপুরের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘কী ভাবে আগুন লাগল ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা তা খতিয়ে দেখবেন।’’

খবর পেয়ে ওই রাতেই ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় কাউন্সিলর সৌমেন দত্ত। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘গোটা ঘর পুড়ে গিয়েছে। রাতেই সাথী ও ঝিলিককে এলাকার একটি কমিউনিটি হলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের খাবারও দেওয়া হচ্ছে।’’ অন্য দিকে, যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই পরিবারকে সহযোগিতা করত, তার তরফে সমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘শেষকৃত্যের জন্য স্মৃতিদেবীর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই পুরসভা, পুলিশ ও আমরা সকলে মিলে চিন্তাভাবনা করছি, পরবর্তী কী পদক্ষেপ করা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন