খুনের পাল্টা খুন বনগাঁয়

তুফানের মুখ থেকে খুনের কথা জানতে পেরে গ্রামের লোকজন নিজেরাই আইন হাতে তুলে নেন। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের মাঠে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় তুফানকে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫৮
Share:

খুনের ঘটনার বদলা নিতে এক যুবককে পিটিয়ে খুনের ঘটনা ঘটল শুক্রবার রাতে। বনগাঁ থানার উনাই গ্রামের ওই ঘটনায় নিহতের নাম তুফান গোলদার (২৬)। বাড়ি ওই গ্রামেই। তুফানকে খুনের অভিযোগে পুলিশ ওই রাতেই স্থানীয় চার গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে উনাই গ্রামেরই হারান মণ্ডলের দেহ মেলে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি পুকুরের পাশের ঝোপে। গলায় গামছার ফাঁস দেওয়া ছিল তাঁর। সোমবার সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিলেন বছর সাতচল্লিশের ওই ব্যক্তি। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করে। পরিবারের পক্ষ থেকে শনিবার রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ রবিবার ভীষ্ম পরামানিক নামে এক জনকে গ্রেফতার করেছে।

তবে এই খুনের ঘটনায় গ্রামবাসীর সন্দেহ গিয়ে পড়ে গ্রামের যুবক তুফানের উপরে। হারানবাবুর সঙ্গে তুফানের সম্পর্ক ছিল। সোমবার সন্ধ্যায় হারানকে হুমকি দিতে দেখা গিয়েছিল তুফানকে। গ্রামবাসী জানতে পারেন, নিখোঁজ হওয়ার আগে হারানকে শেষবার তুফানের সঙ্গেই দেখা গিয়েছিল। গ্রামের লোকের বক্তব্য, হারানের দেহ উদ্ধারের পর থেকে তুফানের আচরণ স্বাভাবিক ছিল না। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ গ্রামবাসীদের একাংশ তুফানকে চেপে ধরেন। মারধর করা হয়। গ্রামের লোকের দাবি, সে সময়ে হারানকে খুনের কথা স্বীকার করে তুফান। ওই ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং গ্রামবাসীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে পুলিশ।

Advertisement

তুফানের মুখ থেকে খুনের কথা জানতে পেরে গ্রামের লোকজন নিজেরাই আইন হাতে তুলে নেন। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের মাঠে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় তুফানকে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানেই মারা যায় সে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তুফানের আচার-আচরণে এলাকার মানুষ তিরিবিরক্ত ছিলেন। সারা দিন নেশা করে থাকত ওই যুবক। চুরিচামারিতে হাত পাকিয়েছিল। মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। স্ত্রী-ও তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। তুফানের বাবা নানা অসামাজিক কাজে যুক্ত ছিল বলেও অভিযোগ। এলাকার মানুষের চাপে সে-ও এলাকা ছাড়া। কিছু দিন আগে তুফানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়ার অভিযোগে। জেল খেটে জামিনে মুক্ত ছিল সে।

কিন্তু হারানকে খুনের ঘটনায় নাম জড়াল কেন তার?

নিহতের পরিবার ও গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, দিন কয়েক আগে গ্রামের এক যুবককে গলায় তারের ফাঁস দিয়ে তুফান মেরে ফেলতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ। দেখতে পেয়ে হারানবাবু সেখানে গিয়ে তুফানকে চড়থাপ্পর মারেন। ছেলেটি বেঁচে যায়। অভিযোগ, এরপরেই হারানকে খুনের ছক কষে তুফান।

ছাগল কেনাবেচার ব্যবসা করতেন হারান। তাঁর দুই ছেলে। তাঁদেরই একজন উত্তম বলেন, ‘‘বাবার কোনও শত্রু থাকতে পারে বলে আমরা ভাবতেই পারিনি। তাই থানায় অভিযোগ করা হয়নি। শুক্রবার রাতে জানতে পারলাম বাবাকে তুফানই খুন করেছে।’’ তবে তাকে কারা মারধর করেছে, হারানবাবুর পরিবারের সদস্যেরা সে সব জানেন না বলেই দাবি করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন