আক্রান্ত পুলিশ

স্ত্রীর গলা কেটে নিজের শাস্তি চায় সন্দীপ

কখনও শাশুড়ির সঙ্গে মন কষাকষি। কখনও স্ত্রীর সঙ্গে মারপিট। এ ভাবেই দিন কাটছিল ঘরজামাইটির। কিন্তু সংসারে বিবাদ চরমে ওঠায় আর মাথার ঠিক রাখতে পারেননি। দা দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ উঠৈছে স্বামীর বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোপালনগর শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৪৬
Share:

শেষমেশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

কখনও শাশুড়ির সঙ্গে মন কষাকষি। কখনও স্ত্রীর সঙ্গে মারপিট। এ ভাবেই দিন কাটছিল ঘরজামাইটির। কিন্তু সংসারে বিবাদ চরমে ওঠায় আর মাথার ঠিক রাখতে পারেননি। দা দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগ উঠৈছে স্বামীর বিরুদ্ধে।

Advertisement

আর যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার উত্তাল হল গোপালনগর থানার চৌবেড়িয়া ঠাকুরতলা এলাকা। অভিযুক্ত সন্দীপ সরকারকে উদ্ধার করতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। জনতার দাবি, ‘গণ আদালতে’ বিচার হবে ‘খুনি’র। পুলিশের হাতে ছাড়া হবে না কোনও মতেই।

এই পরিস্থিতিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল-পাটকেল ছোড়া হয়। জখম হন জনা ছ’য়েক পুলিশকর্মী। পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুর চলে। শেষমেশ অবশ্য পুলিশ উদ্ধার করেছে সন্দীপকে। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। ভেঙে পড়েছে অভিযুক্ত যুবকটিও। তাঁর কথায়, ‘‘শাশুড়ি আমাদের সংসার ভেঙে দিতে চাইত। স্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে অশান্তি বাধাত। দু’জনে মিলে আমাকে মারধর করত। এ দিন সকালেও স্ত্রী আমাকে মারতে এসেছিল। মাথা ঠিক রাখতে না পেরে খুন করেছি।’’

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠাকুরতলা এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মী সরকারের (২৪) সঙ্গে বছর পাঁচেক আগে বিয়ে হয় গাইঘাটার রামচ‌ন্দ্রপুরের যুবক সন্দীপের। ওই দম্পতির তিন বছরের একটি মেয়ে মেয়ে ও ছ’মাসের পুত্রসন্তান আছে। কিছু দিন ধরে সন্দীপ শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই থাকছিলেন। শাশুড়ি ভানুদেবীর অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। মাস ছ’য়েক আগে তিনি মেয়ে-জামাইয়ের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করে দেন। তিনিও থাকতেন মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গেই। সন্দীপ হাবরায় একটি সেলাই কারখানায় কাজ করেন। অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নানা কারণে অশান্তি চলছিল।

এ দিন সকালেও গোলমাল বাধে। অভিযোগ, বেলা ১টা নাগাদ শাশুড়ি বাড়ির থেকে বেরিয়েছিলেন। সে সময়ে গ্রিলের তালা বন্ধ করে সন্দীপ তাঁর স্ত্রীকে দা দিয়ে কোপান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী অন্নপূর্ণা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমি বাড়ির উঠোনে ছিলাম। হঠাৎ আমাকে লক্ষ্মীর সাড়ে তিন বছরের মেয়ে অন্তরা ডাক দেয়। ওই ডাক শুনে একটু এগোতেই দেখি, ওদের ঘরের গ্রিলে তালা দেওয়া। লক্ষ্মী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছে। দেখি সন্দীপ ওকে কোপাচ্ছে। আর লক্ষ্মী হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করছে। আমি চিৎকার করতেই সন্দীপ আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয় ঘরের ভিতর থেকেই। এরই মধ্যে দেখলাম, বৌয়ের গলায় সজোরে কোপ মারল সন্দীপ। মেঝেতে লুঠিয়ে পড়ল মেয়েটা।’’

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরে বাড়ির সামনে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। কিন্তু তখনও ঘরের ভিতরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ওই যুবক। সাহস করে কেউ ঢুকতে পারছিল না। খবর যায় পুলিশের কাছে।

গোপালনগর থানার পুলিশ পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। লিটন রক্ষিত নামে এক পুলিশকর্মী ভিতরে ঢুকে কথাবার্তা শুরু করেন সন্দীপের সঙ্গে। এ দিকে, ততক্ষণে উত্তেজিত জনতা ঘিরে ফেলেছে বাড়ি। সন্দীপকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে, এই দাবি জানাতে থাকে জনতা।

পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে শুনে গাইঘাটা থানার ওসি অনুপম চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে পৌঁছন। বেলা ২টো নাগাদ পুলিশ সন্দীপকে ঘর থেকে বের করে গাড়িতে তুলতে গেলেই জনতার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা পুলিশকে তাড়া করে। ইট-পাটকেল উড়ে আসতে থাকে। কয়েকজন পুলিশ কর্মী চোট পান। একটি গাড়ির কাচও ভেঙে যায়। ইতিমধ্যে সন্দীপের স্ত্রী ভানুদেবী শাবল নিয়ে চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন জামাইয়ের উপরে। যদিও কোনও মতে তা ঠেকিয়ে দেয় পুলিশ।

জনরোষের মধ্যেই সন্দীপকে গাড়িতে তুলে গোপালনগর থানায় নিয়ে যান পুলিশকর্মীরা। পরে বনগাঁ থানা থেকেও পুলিশ আসে। তিনটি থানার পুলিশ মিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বেলা আড়াইটে নাগাদ পুলিশ দেহ উদ্ধার করে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়। হয়েছেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

কাঁদতে কাঁদতে বার বার সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন ভানুদেবী। কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই জামাই আমার মেয়েটাকে অত্যাচার করত। কারও সঙ্গে মেয়ের সম্পর্ক আছে, এই সন্দেহ ছিল ওর।’’

পুলিশের কাছে সন্দীপের আর্জি, ‘‘স্যার আমি অন্যায় করেছি। আমাকে ফাঁসির দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন