যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি চাইছেন নতুন ভোটারেরা

জয়নগর-মজিলপুর একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শহর। কথিত আছে, জয়নগরের বুক চিরে এক সময় বয়ে যাওয়া আদি গঙ্গা মজে গিয়ে তৈরি হয় জনপদ। সে কারণেই মজিলপুর নামও প্রচলিত। ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার সূচনা হয়। ১৯৮৫ সালে ওয়ার্ড বেড়ে হয় ১১টি। পরে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০০০ সালে ১৪টি ওয়ার্ড হয়

Advertisement

দিলীপ নস্কর

জয়নগর শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৩৭
Share:

উপরে বাঁ দিক থেকে, কুহেলি দাস, নমিতা বৈরাগী, প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল, স্বাধীন মণ্ডল, শাশ্বতী হালদার ও শুভশ্রী মুখোপাধ্যা। জয়নগরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

জয়নগর-মজিলপুর একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শহর। কথিত আছে, জয়নগরের বুক চিরে এক সময় বয়ে যাওয়া আদি গঙ্গা মজে গিয়ে তৈরি হয় জনপদ। সে কারণেই মজিলপুর নামও প্রচলিত।

Advertisement

১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল ৩টি ওয়ার্ড নিয়ে জয়নগর-মজিলপুর পুরসভার সূচনা হয়। ১৯৮৫ সালে ওয়ার্ড বেড়ে হয় ১১টি। পরে জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০০০ সালে ১৪টি ওয়ার্ড হয়। বর্তমানে পুর এলাকায় জনসংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এ বারের ভোটার সংখ্যা ২০,২৮৫ জন। তার মধ্যে নতুন ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের শাশ্বতী হালদার প্রথমবার ভোটের কালি আঙুলে লাগাতে খুব উৎসাহী। মন্দিরবাজারের গৌরমোহন শচীন মণ্ডল মহাবিদ্যালয়ের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী ওই তরুণী। প্রায় এক বছর আগে ভোটার পরিচয়পত্র হাতে পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কার্ডটা হাতে পাওয়ার পর থেকেই বুথে ঢুকে ভোট দেওয়ার দিন গোনা শুরু হয়েছিল। অবশেষে আমার অপেক্ষার পালা শেষ হতে চলেছে।’’ এখন শুধু বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচেকের হাঁটা রাস্তা মজিলপুর বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মনে মনে। শাশ্বতী বলেন, ‘‘তবে ভোট দেওয়ার কথা মনে পড়লে ভয় ভয়ও লাগছে, আবার আনন্দও লাগছে। ভোটের দিন সকাল সকাল মায়ের সঙ্গে গিয়ে ভোট দেব। তবে ওই দিনটা বিশেষ দিন হিসাবে মনে রাখতে অবশ্যই বাড়িতে ভাল খাওয়ার ব্যবস্থা হবে।’’ যেই জিতুন, তাঁর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘এখান থেকে কলকাতা যাওয়ার একমাত্র ভরসা ট্রেন। তাঁর অনুরোধ, বাসে যাতে কলকাতায় যাওয়া যায় সে দিকে যেন নজর দেওয়া হয়।’’

Advertisement

পাশের পাড়ায় বাড়ি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ প্রথম বর্ষের ছাত্রী কুহেলি দাস। এ বারে জীবনের প্রথম ভোটটা দিতে যাবেন বুথে। কুহেলি বলেন, ‘‘ভোট দেওয়াটা একটা নাগরিক অধিকার। উন্নয়নের স্বার্থে আমি ভোট দিতে যাব। তবে সকালে কাগজ খুললেই এখন দেখতে হচ্ছে মেয়েদের উপর নির্যাতনের খবর। এর একটা বিহিত দরকার। আমি চাই যাঁদের ক্ষমতায় আনব, তাঁরা যেন সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান।’’

৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ভোটার কার্ডটা বছর দুয়েক আগে হাতে পেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। জীবনের প্রথম ভোট দেওয়ার দিনটা দেখতে দেখতে এসে গেল। ওই তরুণীর কথায়, ‘‘ভোটার কার্ড হাতে পাওয়ার আগে বাবার ভোটার কার্ডে মোবাইলে সিম ভরেছিলাম। এখন নিজের কার্ড দিয়ে নিজস্ব পরিচয়ে সব কাজ করতে পারব।’’ তাঁদের বাড়ির পাশে একটি স্কুলে ভোটের বুথ হয়। সকাল সকাল বাবা-মায়ের সঙ্গে গিয়ে নিজের ভোটটা দেবেন তিনি। যেই জিতুন, তাঁর কাছে প্রিযাঙ্কার আবেদন, ‘‘এলাকায় যেন শান্তি বজায় থাকে।’’ ভবিষ্যতে এ রাজ্যে কোনও চিটফান্ড গড়ে উঠতে না পারে সে দিকে প্রত্যেকের নজর দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন জয়নগরের নতুন এই ভোটারটি।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের স্বাধীন মণ্ডল বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারি মাসে কার্ডটা হাতে পাওয়ার পর দারুণ খুশি হয়েছি। এ বার থেকে আমার মতামতও গুরুত্ব পাবে। এত দিন বাবা মায়ের ভোটার কার্ড নিয়ে মোবাইলে সিম ভরা থেকে শুরু করে অন্য কাজ করেছি। আমার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতেই ভোট দেব।’’ তবে জীবনের প্রথম ভোটটা লাইনে সবার আগে দাঁড়িয়ে দিতে চান ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওই ছাত্র। আগে দেখেছি ভোট কেন্দ্রের কাছে নেতারা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ওখানেই খাওয়ার ইচ্ছে আছে। তবে বর্তমানে এই পুরসভায় বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে বলেও তিনি জানান। যানজট, নিরাপত্তার অভাব, পরিবহণ ব্যবস্থার সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া, আজ পর্যন্ত বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল সরাবরাহের ব্যবস্থা হল না। আগামী দিনে পুরসভা থেকে এই সমস্ত বিষয়গুলির উপর নজর দেওয়া উচিত।

বান্ধবীর বাড়িতে যাওয়ার আগে প্রথম ভোট দিতে যাওয়ার প্রস্তুতি জানিয়ে গেলেন নমিতা বৈরাগী। উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া ওই ছাত্রীটি বলেন, ‘‘ভোটার কার্ড হাতে পাওয়ার পর মনে হয়েছে এ বার আমি স্বাবলম্বী হলাম। আমি সে দিন নতুন জামা পড়ে ভোট দিতে যাব। নিজে ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করব ভাবলে যেন কেমন লাগছে। আমার বাবা একজন ভ্যান চালক। দুঃস্থ পরিবারে আর্থিক সংকটের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আজ পর্যন্ত কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা পেলাম না। পুরসভা থেকে আমাদের পরিবারকে কোনও সুযোগ সুবিধা দেয়নি।’’ ভোটের পর দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদের পাশে পুরসভার জন প্রতিনিধিদের থাকা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সন্ধ্যায় বাড়িতে পড়তে বসার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন শুভশ্রী মুখোপাধ্যায়। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই তরুণী ধ্রুবচাঁদ হালদার কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। শুভশ্রী জানালেন, ভোটার কার্ডটা হাতে পাওয়ার পরে একটা বিউটি পার্লারে প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হতে পেরেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার খুব ইচ্ছে নতুন জামা পরে জীবনের প্রথম ভোটটা সবার প্রথমে দেব। পুরসভায় যাঁরাই ক্ষমতায় আসুক পরিবহণ ব্যবস্থার জন্য ট্রেনের সংখ্যা বাড়ালে ভাল হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন