জ্বর-ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে, আতঙ্কে হাবড়ার বাসিন্দারা 

পুরসভা ও হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অগস্ট মাসে পুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাবড়া শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:৩০
Share:

মশা মারতে সাফ করা হচ্ছে কচুরিপানা। হাবড়ার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: সুজিত দুয়ারি

ফের জ্বর ও ডেঙ্গির আতঙ্ক ছড়াচ্ছে হাবড়ায়। পুরসভা ও হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অগস্ট মাসে পুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘জানুয়ারি মাস থেকে অগস্ট মাস পর্যন্ত ২৫ জন মানুষের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। তার মধ্যে অগস্ট মাসেই ১১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।’’
হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে স্থানীয় বাণীপুর ও আক্রমপুর এলাকার দুই ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তিও হন। এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
গত বছরেও পুর এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল। কয়েকজন জ্বর ও ডেঙ্গিতে মারাও গিয়েছিলেন। আক্রান্ত হন বহু মানুষ। সে সব নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল বহু এলাকায়।
সে সময়ে বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছিলেন, পুরসভা আগেভাগে মশা মারতে পদক্ষেপ করেনি। বন জঙ্গল সাফাই ও জমা জল নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়নি। সে জন্যই এই অবস্থা।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে পুরসভা জ্বর-ডেঙ্গি রুখতে পদক্ষেপ শুরু করে। পুরসভার কর্মীরা নিয়মিত বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার লার্ভা শনাক্ত করছেন ও মানুষকে ডেঙ্গি সম্পর্ক সচেতন করছেন। ওয়ার্ডগুলিতে মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জলাজমি ও পুকুরে গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, এই কাজে ১২০ জনের টিম করা হয়েছে। ৬ জনের একটি দল ২৪টি ওয়ার্ডেই প্রতিদিন মশা মারার তেল স্প্রে করছেন। বন জঙ্গল কাটা হচ্ছে। সাফ করা হচ্ছে এলাকার নালাগুলিও।
তা ছাড়াও, ২৪ জনের একটি দল ওয়ার্ডগুলিতে বিশেষ সাফাই অভিযান করছেন।
এত কিছুর পরেও কেন জ্বর-ডেঙ্গি বন্ধ হচ্ছে না?
পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, পুর এলাকায় প্রচুর নিচু ও জলাজমি রয়েছে। বিশেষ করে পুরসভার ৫, ১১, ৯, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে লো ল্যান্ড। পুর এলাকায় আজও পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। ফলে ওই সব নিচু জমিতে বৃষ্টির জল জমে গেলে তা বের করার উপায় থাকে না। আর বৃষ্টির পরিষ্কার জল সাত দিন জমে থাকলেই সেখানে ডেঙ্গি মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের হৃষিনন্দন বিশ্বাস জানিয়েছেন, জ্বর-ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভা চেষ্টা করছে। কিন্তু ওই কাজ আরও নিবিড় ভাবে করা প্রয়োজন। বাস্তবে কাজের ক্ষেত্রে মশা মারার কাজে ফাঁকফোকর থাকছে।’’
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে আরও সর্তক থাকতে হবে। প্লাস্টিক ও থার্মোকল ব্যবহার বন্ধ করা নিয়ে তাঁদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে।’’
ডেঙ্গি প্রতিরোধে পুরসভার তরফে প্লাস্টিক ও থার্মোকলের ব্যবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে এখনও এলাকার বাজারগুলিতে গোপনে চলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার।
ক্রেতা-বিক্রেতারা একাংশ গোপনে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন। অনেকেই নিকাশিনালা, বসতবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ফেলে রাখছেন। তার মধ্যে মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে।
কিছু নালার মধ্যে আবর্জনাও পড়ে রয়েছে। বাসিন্দারা জানান, এ বছরেও মশার উপদ্রব শুরু হয়েছে। সন্ধ্যার পরে মশার কামড়ে মানুষ নাজেহাল হচ্ছেন।
পুর কর্তৃপক্ষ জানান, পুর কর্মীরা মশা মারতে কোনও বাড়িতে গিয়েছেন, সেই বাড়ির লোকজন তাঁদের বাড়ির পিছনের দিকে ও ছাদে যেতে বাধা দিচ্ছেন। এতবার করে পুরকর্মীরা কেন বাড়িতে আসছেন, তা নিয়েও আপত্তি জানাচ্ছেন কিছু মানুষ। ফলে কাজ আটকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে মানুষকেও সচেতন হতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন