মাস্ক ছাড়াই বাজারে ঘোরাঘুরি। ছবি: সুজিত দুয়ারি
পরিযায়ী শ্রমিকদের হাত ধরে হাবড়া ও অশোকনগর থানা এলাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা পজ়িটিভ বাড়লেও মানুষের মধ্যে থেকে করোনা নিয়ে সচেতনতা দিন দিন কমছে বলেই মনে করছেন অনেকে। মুখে মাস্ক ছাড়াই বাজার-হাটে বেরোতে দেখা যাচ্ছে বহু মানুষকে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধিও উধাও।
এরই মধ্যে বুধবার রাতে এবং বৃহস্পতিবার সকালে ৮ জন করোনা পজ়িটিভ হলেন অশোকনগর- কল্যাণগড় পুর এলাকায়। পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘৮ জনের লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট পেয়েছি। সকলেই করোনা পজ়িটিভ। আক্রান্তদের ৩ জন পরিযায়ী শ্রমিক। একজনকে কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। তাঁদের সংস্পর্শে আসা আত্মীয়-স্বজনদের গৃহনিভৃতবাসে রেখে নজর রাখা হচ্ছে। এলাকা জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।’’ পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা আক্রান্তদের বাড়ি পুরসভার ১৩, ১৯, ১৬, ১৮, ১১, ৫ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। এখানে করোনা পজ়িটিভ মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ জন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনই পরিযায়ী শ্রমিক। প্রবোধ বলেন, ‘‘পুরসভা এলাকায় এখন প্রাতিষ্ঠানিক নিভৃতবাসের সংখ্যা ১২টি। সেখানে ৫১ জন রয়েছেন।’’
পুরসভা ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফেরার পরে হাবড়া ও অশোকনগর থানা এলাকায় এখনও করোনা পজ়িটিভ মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ জন। হাবড়া পুর এলাকায় ১৮ জন, হাবড়া ১ ব্লক এলাকায় ৯ জন, অশোকনগর - কল্যাণগড় পুরসভা এলাকায় ১৮ জন, এবং হাবড়া ব্লক ২ এলাকায় ২১ জন করোনা পজ়িটিভ হয়েছেন। বেশিরভাগই পরিযায়ী শ্রমিক। তবে কলকাতা যোগাযোগেও কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ চাকুরি কেউ বা ব্যবসার সূত্রে কলকাতা গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। হাবড়ার এক মিষ্টি দোকানি অবশ্য আক্রান্ত হয়েছেন
এলাকা থেকেই।
হাবড়া-অশোকনগর এলাকার বাসিন্দারা মনে করছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের আরও বেশি করে লালারস পরীক্ষার প্রয়োজন। এখন ভিন্ রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের উপসর্গ না থাকলে লালারস পরীক্ষা করা হচ্ছে না। বাসিন্দাদের বক্তব্য, এখন উপসর্গ ছাড়াও মানুষ করোনা পজ়িটিভ হচ্ছেন। বাইরে থেকে ফিরে শ্রমিকেরা স্কুল নিভৃতবাসে আরও অনেকের সঙ্গে থাকছেন। কেউ একজন করোনা পজ়িটিভ থাকলে সকলেই সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। তা ছাড়া, বেসরকারি ভাবে যাঁরা ফিরছেন, তাঁদের স্কুল নিভৃতবাসে অনেক ক্ষেত্রেই রাখা হচ্ছে না। তাঁরা পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করছেন। গ্রামবাসীর সংস্পর্শে আসছেন। তবে এলাকার মানুষ সচেতন হওয়ার ফলে বাইরে থেকে এসে কেউ এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে চাইলে অনেকে বাধা দিচ্ছেন।
প্রশাসনিক কর্তারা বলেন, ‘‘লকডাউন শিথিল হতেই কিছু মানুষের ধারণা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ কমে গিয়েছে। সকলকে বুঝতে হবে, এখন আমাদের নিজেদের আরও বেশি করে সচেতন থাকতে হবে। বাইরে বেরোলে মাস্ক ব্যবহার দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ করে নিতে হবে।’’ বার বার হাত ধোয়ারও পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।