Bagda

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অনিয়মিত ডাক্তার, ভোগান্তি সিন্দ্রাণীবাসীর

এলাকাবাসী জানান, দুপুর ২টোর পর কোনও শারীরিক সমস্যা হলে এলাকার মানুষকে ছুটতে হয় ১৮ কিলোমিটার দূরে বাগদা গ্রামীণ হাসপাতাল বা ৩০ কিলোমিটার দূরের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে।

Advertisement

নির্মাল্য প্রামাণিক

বাগদা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:১৫
Share:

চিকিৎসক মেলে না এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই। নিজস্ব চিত্র।

সপ্তাহে প্রায় চারদিন ৫ ঘণ্টা করে চিকিৎসকের দেখা মেলে। বাকি সময় এলাকার মানুষ অসুস্থ হলেও অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার থাকে না তাঁদের। এমন অবস্থা বাগদার সিন্দ্রাণী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের।

Advertisement

এলাকাবাসী জানান, দুপুর ২টোর পর কোনও শারীরিক সমস্যা হলে এলাকার মানুষকে ছুটতে হয় ১৮ কিলোমিটার দূরে বাগদা গ্রামীণ হাসপাতাল বা ৩০ কিলোমিটার দূরের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে। ৫ কিলোমিটার দূরে দত্তপুলিয়া হাসপাতাল আছে। কিন্তু অন্য জেলার মানুষ সেখানে গেলে খারাপ ব্যবহার করেন কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ।

কিছু দিন আগে সিন্দ্রাণীর বাসিন্দা শিক্ষক শুভঙ্কর সাহার ১২ বছরের ছেলের সন্ধ্যার পর পেটে ব্যাথা হয়। সিন্দ্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্র তখন বন্ধ থাকায় ছেলেকে নিয়ে যান নদিয়ার দত্তপুলিয়া হাসপাতালে। সেখানে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখার পর ছেলের চিকিৎসা শুরু করা হয় বলে অভিযোগ তাঁর। শুভঙ্কর বলেন, ‘‘ওখানে আমাদের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। বাগদা বা বনগাঁয় না গিয়ে অন্য জেলার হাসপাতালে কেন গেলাম, তার জবাবদিহি করতে হয়েছে। মনে হচ্ছিল, ওখানে গিয়েই ভুল করে ফেলেছি।’’ একই রকম অভিজ্ঞতা সিন্দ্রাণীর বিজয় রায়েরও। তাঁর বাড়ির সামনে হেলেঞ্চা দত্তপুলিয়া সড়কে দুর্ঘটনাগ্রস্ত একজন মানুষকে নিয়ে দত্তপুলিয়া হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়েছিল। তিনি বলেন,‘‘আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার না থাকায় নিত্যদিন ভোগান্তির শিকার হতে হয়।’’

Advertisement

সিন্দ্রাণী, সাঁড়াহাটি, নলডুগারি, চরমণ্ডল, পুস্তিঘাটা, বাজিৎপুর, হরিনগর-সহ প্রায় ২৫টি গ্রামের মানুষ ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত বহির্বিভাগ খোলা থাকে। সিন্দ্রাণীর বাসিন্দা কুমকুম বিশ্বাস, অসীম অধিকারীরা জানান, এখানে সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশি, পেটের ব্যারামের ওষুধ ছাড়া অন্য কোনও চিকিৎসা মেলে না। সপ্তাহে দু’দিন একজন চোখের টেকনিশিয়ান বসেন। এখন অবশ্য সপ্তাহে দু’দিন কোভিড পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়েই অন্যত্র যেতে হয়।

এলাকাবাসীরা জানাচ্ছেন, বছর পঁচিশ আগে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০টি শয্যা ও প্রসব করানোর ব্যবস্থা ছিল। ২০০৭-০৮ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আবাসনে ডাক্তার থাকতেন। তখন ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা পাওয়া যেত। সেই আবাসন ভেঙে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তারপর কয়েক বছর আগে নতুন করে আবাসন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভবনের একাংশ নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালে তথ্য জানার অধিকার সংক্রান্ত আইনে করা এক চিঠির জবাবে স্বাস্থ্য দফতর জানায়, ‘ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’জন ডাক্তারের অনুমোদন ও পরিকাঠামো রয়েছে, শীঘ্রই প্রসব করানোর ব্যবস্থা ও শয্যা চালু করা হবে।’ কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। এলাকাবাসীরা ২০১৭ সালে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। সিন্দ্রাণীতে কোনও অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা নেই। কয়েক বছর আগে বিধায়ক তহবিল থেকে একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা দীর্ঘদিন ধরে খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রাইভেট গাড়িতে রোগী নিয়ে বনগাঁ বা বাগদায় যেতে হলে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিতে হয়। এখন করোনা আবহে অনেক চালকই গাড়িতে রোগী তুলতে চাইছেন না।

বাগদার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব মল্লিক বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক সপ্তাহে একদিন বয়রা এলাকায় এক মেডিক্যাল ক্যাম্পে যান। সেই সময় অসুবিধা হতে পারে।" তবে কর্মীর অভাবের কথা তিনিও স্বীকার করে নিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টি জানে বলে তিনি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন