মিড ডে মিলের আলু পচছে স্কুলে

প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক স্কুলে মিড ডে মিলের জন্য বস্তা বস্তা আলু পাঠানো হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু সেই আলু সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই বনগাঁ মহকুমার বহু স্কুলে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৫৬
Share:

প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিক স্কুলে মিড ডে মিলের জন্য বস্তা বস্তা আলু পাঠানো হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু সেই আলু সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই বনগাঁ মহকুমার বহু স্কুলে। কোথাও আলুর বস্তা ফেলে রাখা হয়েছে সাইকেল শেডের নীচে। কোথাও আবার ক্লাসঘরের মধ্যেই বস্তা-ভর্তি করে আলু রাখা হয়েছে।

Advertisement

গরমে সেই আলু ইতিমধ্যেই পচতে শুরু করেছে। দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ বস্তা থেকে পচা আলু বেছে বাইরে ফেলে দিচ্ছেন। স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষকদের একাংশ এবং অভিভাকেরা এ ভাবে আলুর অপচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আলুর ফলন বেশি হওয়ায় মিড ডে মিলে আলু আগেও পাঠিয়েছিল রাজ্য। সেই আলুও ক্ষেত্রবিশেষে নষ্ট হয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিল।

বিভিন্ন স্কুলে এত দিন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বাজার থেকে আলু কিনে রান্না করতেন ফলে পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকত না। তাঁরা এক সঙ্গে বেশি আলু কিনতেন না। কিন্তু সরকার গায়ে পড়ে বেশি বেশি আলু পাঠানোয় সমস্যা দেখা দিয়েছে। বনগাঁ ব্লকের গাঁড়াপোতা পঞ্চায়েত এলাকায় রয়েছে মুড়িঘাটা জিএসএফপি স্কুল। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্কুলের পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের জন্য ২৮ মার্চ স্কুলে ৫ বস্তা আলু পাঠানো হয়। প্রতি বস্তায় আলু রয়েছে ৫০ কেজি করে। বস্তা-ভর্তি আলু প্রথমে রাখা হয়েছিল অফিস ঘরে। সেখান থেকে নিয়েই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা রান্না করছিলেন। বৃহস্পতিবার স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের নজরে আসে, আলু পচে গন্ধ বেরোচ্ছে। শিক্ষকেরা ঘরে টিঁকতে পারছিলেন না। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে সেই পচা আলু বস্তা থেকে বের করে বেছে ফেলে দেওয়া হয়েছে। বাকি আলু মিড ডে মিল রান্নার ঘরে মেঝেতে বিছিয়ে রাখা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক প্রত্যুষকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রায় ৬ কেজি মতো আলু পচে গিয়েছে।’

Advertisement

এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বনগাঁ শহরের ঐতিহ্যপূর্ণ বনগাঁ হাইস্কুলে (প্রাথমিক বিভাগ) শনিবার ২৫ বস্তা আলু পাঠানো হয় পুরসভার পক্ষ থেকে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে এক সঙ্গে এত আলু রাখার ব্যবস্থা না থাকায় শৌচালয়ের পাশে সাইকেল রাখার শেডের নীচে বস্তা রাখা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক নারায়ণ দত্ত বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আলু পচতে শুরু করেছে। কী ব্যবস্থা হবে কে জানে!’’

নূতনগ্রাম অবৈনতিক প্রাথমিক স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, একটি ঘরের মেঝেতে আলু বস্তা থেকে বের করে রাখা হয়েছে। পাশে বেশ কিছু পচে যাওয়া আলু আলাদা করে রাখা। খড়ের মাঠ রাখালতলা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে গিয়েও দেখা গেল ক্লাসে এক বস্তা আলু রাখা। তার মধ্যে কিছু পচতে শুরু করেছে।

অন্য রকম ছবিও অবশ্য আছে। গোপালনগরে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত বক্সী যেমন জানালেন, তাঁদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। একটি আলাদা ঘরে আলু বস্তা থেকে বের করে মেঝেয় বিছিয়ে রাখা হয়েছে। ফ্যানও চালিয়ে রাখা হচ্ছে। পচন ধরেনি।

উত্তর ২৪ পরগনার জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের সভাপতি সম্রাট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আলু যাতে না পচে যায়, সে জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রধান শিক্ষককে আরও যত্নবান হতে হবে। তবে যদি কিছু আলু পচে যায়, তবে তা যেন ফেলে দেওয়া হয়।’’

বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় জানান, তিনি নিজেও বহু স্কুলে ঘুরে দেখেছেন, সেখানে আলু পচেনি। মেঝেতে খোলামেলা ভাবে ছড়িয়ে রাখলে আলু অনেক দিন ভাল থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন