আবেদন মঞ্জুর সংসদে, স্কুলেই সমাদরে পরীক্ষা দিল সমাদৃতা

স্কুলের একটি ঘরেই পাতা হয়েছিল বিছানা। সেখানে বসে কাঠের স্ট্যান্ডে ভর দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষাটা দিয়ে ফেলল সমাদৃতা চক্রবর্তী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মধ্যমগ্রাম শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ০১:২৩
Share:

পরীক্ষা: সংসদ সভাপতির সামনে। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের একটি ঘরেই পাতা হয়েছিল বিছানা। সেখানে বসে কাঠের স্ট্যান্ডে ভর দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষাটা দিয়ে ফেলল সমাদৃতা চক্রবর্তী। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস বুধবার নিজে এসে দেখে গেলেন পরীক্ষার্থীকে। বললেন, ‘‘কষ্ট হলেই জানাবে। আমরা সঙ্গে আছি। বেস্ট অব লাক, মাই চাইল্ড।’’

Advertisement

জন্ম থেকেই বছরে সাত কোটি টাকা খরচের ‘স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি’ (এসএমএ)-তে ভুগছে মধ্যমগ্রামের সমাদৃতা। বিছানা থেকে নড়ার উপায় নেই। তাই বাড়িতে বসে কিংবা বাড়ির কাছে ‘হোম সেন্টার’ থেকে পরীক্ষা দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল পরিবার।

মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদেও ২১ বার দরবার করেন তাঁরা। কিন্তু সুরাহা হচ্ছিল না। সংসদ জানিয়ে দেয়, হাসপাতাল বা নার্সিংহোম ছাড়া ওই ভাবে পরীক্ষা দেওয়ার নিয়ম নেই।

Advertisement

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে বাড়ির কাছে নিজেরই স্কুল, বিরাটির ‘নবজীবন কলোনি নবজীবন বিদ্যামন্দিরে’ সমাদৃতার পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।

বুধবার পরীক্ষা শুরু হওয়া মাত্রই সমস্ত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে আসে সংসদের প্রতিনিধি দল। মহুয়াদেবী এসে সমাদৃতাকে উৎসাহ দেন। প্রধান শিক্ষককে বলেন, ‘‘এ সবের জন্য যতটা সময় নষ্ট হয়েছে, সেই অতিরিক্ত সময়ও যেন দেওয়া হয় সমাদৃতাকে।’’

পরে মহুয়াদেবী বলেন, ‘‘আমার এই পরীক্ষার্থীর যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তা দেখতেই এসেছিলাম।
খুব ভাল পরীক্ষা দিয়েছে। বাকিগুলিও যাতে নির্বিঘ্নে দিতে পারে,
সে ব্যবস্থাও থাকবে।’’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ এক অভাবনীয় ঘটনা। সরকার থেকে শুরু করে সমস্ত প্রশাসন আমার ছাত্রীটির পাশে দাঁড়িয়ে যে এ ভাবে সাহায্য করবে, তা ভাবতেও পারিনি।’’ অভিজিৎবাবুর সংযোজন, ‘‘ও খুব ভাল ফল করবে। শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ মেয়েদের কাছে সমাদৃতা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’

স্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছে সমাদৃতা। তার মেরুদণ্ড থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে গোটা শরীরটাকেই অচল করে দিয়েছে দুরারোগ্য এসএমএ। ছোটবেলা থেকে কলকাতার সমস্ত বড় চিকিৎসক তো বটেই, ভেলোর-সহ বিভিন্ন জায়গায় একমাত্র মেয়ের চিকিৎসার জন্য ছুটেছে সমাদৃতার পরিবার। চিকিৎসকদের কথায়, ৭৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে ওষুধের উপরে বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁরা।

সমাদৃতা যাতে ঘরে বসেই উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়ার সুযোগ পায়, সেই আর্জিই সমস্ত স্তরে জানিয়েছিলেন তার বাবা, বন দফতরের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার সজল চক্রবর্তী। অবশেষে মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। কেমন লাগছে তাঁর? প্রশ্ন শুনে দু’হাত ধরে হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন সজলবাবু। কথা বলতে পারেননি।

তবে এ সব নিয়ে তেমন ভ্রূক্ষেপ নেই পরীক্ষার্থীর। অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে অসহ্য কষ্ট সহ্য করেও ফিরেই সমাদৃতা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ইংরেজি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে। মেয়েকে কাগজ এগিয়ে দেন মা, নমিতাদেবী। বলেন, ‘‘খবরের কাগজ না হলে এক দিনও চলে না। ওটাই তো ওর পৃথিবী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন