চিকিৎসক নেই, ভরসা ফার্মাসিস্ট

সকাল সাড়ে ১০টা। সাবেরা বিবির কোলে একরত্তি শিশু। তার ধুম জ্বর। চিকিৎসার জন্য লম্বা লাইনের পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। শিশুটি কেঁদেই চলেছে। লাইন এগোচ্ছে না দেখে সামনে গিয়ে যেতেই সাবেরা টের পেলেন, চিকিৎসকই আসেননি। পরিবর্তে ফার্মাসিস্ট রোগী দেখছেন।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৭ ০২:৩৬
Share:

অপেক্ষা: স্বাস্থ্যকেন্দ্রের লম্বালাইনে দাঁড়িয়ে মহিলারা। নিজস্ব চিত্র

সকাল সাড়ে ১০টা। সাবেরা বিবির কোলে একরত্তি শিশু। তার ধুম জ্বর। চিকিৎসার জন্য লম্বা লাইনের পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। শিশুটি কেঁদেই চলেছে। লাইন এগোচ্ছে না দেখে সামনে গিয়ে যেতেই সাবেরা টের পেলেন, চিকিৎসকই আসেননি। পরিবর্তে ফার্মাসিস্ট রোগী দেখছেন।

Advertisement

ডায়মন্ড হারবার ২ ব্লকে পঞ্চেম ভবাণীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থায়ী চিকিৎসক নেই। ফলে এ ভাবেই বছরের পর বছর চলছে।

১৯৮০ সালে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অনুমোদন পায়। ভবাণীপুর গ্রামের এক ব্যক্তির ছ’বিঘা দানের জমিতে কেন্দ্রটি গড়ে ওঠে। প্রথম দিকে বেশ কয়েক বছর চিকিৎসক ছিলেন। এলাকার মানুষ পরিষেবাও পেতেন। ২০০৯ সালে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন তৈরি করা হয়। তখন ১০ শয্যার হাসপাতাল তৈরিরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। হাসপাতাল তৈরি না হলেও ওই নতুন ভবনেই এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চলে। প্রায় আড়াইশো রোগী প্রতি দিন আসেন। নুরপুর পঞ্চায়েত ছাড়াও কলাতলা, ভাদুড়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দারাও ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল।

Advertisement

ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে একজন নার্স রয়েছেন। তিনিও এখন ছুটিতে। স্থায়ী সাফাই কর্মী নেই। অবসরপ্রাপ্ত সাফাই কর্মীকে অস্থায়ী ভাবে মাসিক দেড় হাজার টাকা বেতন দিয়ে রাখা হয়েছে। পানীয় জল, শৌচাগার বেহাল। হাসপাতাল চত্বর প্রাচীর দিয়ে ঘেরা নয়। সন্ধ্যার পরে সেখানে মদের আসর বসে বলে অভিযোগ।

অথচ, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরির পরে এলাকার মানুষের সুরাহা হয়েছিল। না হলে রোগী নিয়ে রাত-বিরেতে ছুটতে হতো প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের সরিষা গ্রামীণ হাসপাতাল বা ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন সেই আগের মতোই।

ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়ম করে চিকিৎসক না থাকায় মানুষ ভরসা পাচ্ছেন না। তা ছাড়া কোনও কারণে অস্থায়ী চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট না এলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর উপরে চিকিৎসার ভার ছেড়ে দিতে হয়।ম স্থানীয় বাসিন্দা দেবদূত মণ্ডল, কাশেম মোল্লাদের অভিযোগ, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থায়ী চিকিৎসক ও কর্মী নিয়োগ এবং উন্নয়নের বিষয় নিয়ে গণস্বাক্ষর-সহ স্মারকলিপি স্বাস্থ্য দফতরে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বর্তমান অস্থায়ী চিকিৎসক নাজিরুল ইসলাম জানালেন, তাঁর এ ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। কারণ, সরিষা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তাঁকে প্রায়ই ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন সভায় হাজির হতে হয়। ফলে এখানে সময় মতো আসতে পারেন না।

এ বিষয়ে ডায়মন্ড হারবার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্থায়ী চিকিৎসকের জন্য বিভাগীয় দফতরে জানানো হয়েছে। বাকি সমস্যাগুলির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন