নিজেদের যন্ত্রণার কথা বলে সচেতন করছেন মেয়েদের

ফতেমা বেগম (নাম পরিবর্তিত) মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে গিয়েছিল গুজরাত। সেখানে তাকে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। কথা না শুনলে মারধর করা হত তাকেও। ওই বাড়ির চাকরের প্রচেষ্টায় বাড়ি ফেরে ফতেমা।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ০৩:০৯
Share:

সচেতন: স্কুলে স্কুলে যাচ্ছে এই দল। নিজস্ব চিত্র

বছর কুড়ির রুকসানা খাতুনকে (নাম পরিবর্তিত) তাঁর স্বামী মুম্বইয়ের এক নিষিদ্ধপল্লিতে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সেখান প্রতিদিন তাঁর উপর অত্যাচার হত। কোনও মতে পালিয়ে তিনি ফিরতে পেরেছেন তাঁর পূর্ব জীবনে।

Advertisement

ফতেমা বেগম (নাম পরিবর্তিত) মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে গিয়েছিল গুজরাত। সেখানে তাকে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। কথা না শুনলে মারধর করা হত তাকেও। ওই বাড়ির চাকরের প্রচেষ্টায় বাড়ি ফেরে ফতেমা।

পাচার হয়ে গিয়েও ফিরে আসা এই রকম মহিলারা কিন্তু সমাজের দিকে পিছন ফিরে দিন কাটাচ্ছেন না। বরং নিজেদের করুণ অভিজ্ঞতার কথা অন্যদের শুনিয়ে তাঁদের আগাম সতর্ক করে দেওয়ার জরুরি কাজটি করছেন। সেই সংগঠনের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন।

Advertisement

হাসনাবাদের সাকিলা খাতুন কুড়িজন পাচার হয়ে যাওয়া কিশোরীকে উদ্ধারের পর তাদের নিয়েই সংগঠনটি তৈরি করেছেন। এই সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়েদের বোঝাচ্ছেন, কী ভাবে জয় করতে হবে প্রলোভন। তাঁরা নাবালিকার বিয়ে বন্ধ এবং নারী ও শিশু পাচার রোধ নিয়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রতিটি স্কুলেও যাচ্ছেন।

হাসনাবাদের বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পাচার হওয়া মহিলারা ফিরে এসে যে ভাবে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে সচেতন করতে প্রচার করছেন, তা আমাদের মুগ্ধ করেছে।’’ বিডিও আরও জানান, ইতিমধ্যে ওই সংগঠনের সাহায্যে সুন্দরবনের বেশ কিছু নাবালিকার বিয়ে আটকানো গিয়েছে। দালালদের দৌরাত্ম্যও অনেক কমানো গিয়েছে।

অসহায় প্রান্তিক মহিলারা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগসুবিধা যাতে পান, সেই ক্ষেত্রেও ওই সংগঠন সহায়তা করছে। ইতিমধ্যেই তারা ‘অসহায় মহিলা গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে’র মাধ্যমে ঘর তৈরির জন্য দরিদ্র মহিলাদের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

সাকিলা বলেন, ‘‘সমাজের জন্য কিছু করার নেশায় সুস্থ জীবনে ফেরা মেয়েদের নিয়েই সুন্দরবনের হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের উদ্ধারের চেষ্টা করি। সফলও হচ্ছি। কেউ যাতে ভুল পথে পা বাড়িয়ে পাচারকারীদের খপ্পরে না পড়েন, সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করি আমরা। নিজেদের করুণ অভিজ্ঞতার কথা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বলি। শিশু ও মহিলা পাচারকারীদের নাগাল থেকে তাঁদের সাবধান থাকতে বলি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন