রাজ্য সরকার বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের জন্য চালু করেছে স্বামী বিবেকানন্দ স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প। কিন্তু ওই প্রকল্পে ঋণ পেতে গিয়ে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ওই যুবক-যুবতীরা। ওই প্রকল্পে ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য আবেদন করেও তা না পেয়ে সমস্যায় পড়ছেন অনেকে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়স্ক বেকার যুবক-যুবতীরা স্বামী বিবেকানন্দ স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্পে ব্লকের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে তাঁদের কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্রে (এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ) নাম নথিভুক্ত থাকতে হবে। কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্রের ওই কার্ড নিয়ে ব্লকে আবেদন করতে হবে। সেই মতো ব্লক থেকে একটি ফর্ম দেওয়া হবে। ওই ফর্ম পূরণ করে ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্রের কার্ড-সহ প্রস্তাবিত ব্যবসার প্রজেক্ট রিপোর্ট, ট্রেড লাইসেন্স-সহ প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র জমা দিতে হবে ব্লক অফিসের সেল্ফ হেল্প গ্রুপ অ্যান্ড সেল্ফ এমপ্লয়মেন্ট বিভাগে। পরে ব্লক অফিসের প্রকল্প কমিটি বসে ঠিক করে, কাদের ওই ঋণ দেওয়া হবে। সাধারণত ওই প্রকল্প কমিটিতে থাকেন, বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সেল্ফ হেল্প গ্রুপের সুপারভাইজার-সহ অন্য পদাধিকারিকেরা।
কাদের ওই ঋণ দেওয়া হবে, তা ঠিক করার পরে ওই কমিটি ব্লক লেভেল ব্যাঙ্ক কমিটির (বিএলবিসি) সঙ্গে বৈঠক করে। বিএলবিসি কমিটিতে থাকেন স্থানীয় সমস্ত ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা। তারপর প্রকল্প কমিটি বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় যে সমস্ত ব্যাঙ্ক আছে, সেই সব ব্যাঙ্কে যাঁরা ঋণ পাবেন বলে ঠিক করা হয়, তাঁদের সমস্ত কাগজপত্র পাঠিয়ে দেয়। পরে ব্যাঙ্ক ওই সব কাগজপত্র এবং সব দিক খতিয়ে দেখে ঋণ মঞ্জুর করে।
এই প্রকল্পের ঋণকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ‘আত্মমর্যাদা’ ও ‘আত্মসম্মান’। ‘আত্মমর্যাদা’ ঋণের ক্ষেত্রে একক ভাবে একজন ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। ‘আত্মসম্মান’ ঋণের ক্ষেত্রে যৌথ ভাবে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়।
এই ঋনের জন্য আবেদনকারী বুদ্ধিশ্বর সর্দার বলেন, ‘‘আমি একটি মার্বেল পাথরের দোকান করব বলে সমস্ত নিয়ম মেনে ২.৫ লক্ষ টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কোনও ভাবেই সেই ঋণ পাচ্ছি না। ব্যাঙ্কে গেলে তারা কোনও সদুত্তর দেয় না। আবার ব্লক অফিসে গেলে তারা বলে, ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। বুঝতে পারছি না, কী করব।’’
অন্য এক আবেদনকারী প্রতিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকার বলছে বেকারদের স্বনির্ভর করার জন্য সহজ ভর্তুকিতে ঋণ দেবে। অথচ এই ঋণ পেতে গিয়ে রীতিমতো হয়রান হতে হচ্ছে। আমি বুটিকের কাজ করব বলে সমস্ত নিয়ম মেনে ঋণের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু বহু দিন হয়ে গেল, ঋণ মঞ্জুর হল না।’’ এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড় হয়েছে বলে জানালেন তিনি।
ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পরেশরাম দাস বলেন, ‘‘বেকার ছেলে-মেয়েরা যাতে ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন, সে জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ব্লক থেকে সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু ব্যাঙ্কের গাফিলতির কারণে ঋণ পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে শুনেছি।’’ তাঁর অভিযোগ, এতে আখেরে সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টা মার খাচ্ছে। উল্টে বদনামও হচ্ছে।
ক্যানিং ১ বিডিও কিংশুক চন্দ্র বলেন, ‘‘আমি নতুন এসেছে। এমন কোনও কথা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। প্রয়োজনে আমি বিএলবিসির বৈঠক ডেকে সমস্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলব, যাতে তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা নেন।’’
ক্যানিঙের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে ঠিকই। আমাদের যে কর্মীরা আছেন, তাঁদের দিয়ে সব সময়ে কাগজপত্র খতিয়ে দেখা সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকের আগে ঋণ আছে, যা তাঁরা শোধ করেননি।’’ পাশাপাশি ওই ব্যাঙ্ক কর্তার আশ্বাস, ‘‘যাঁদের সব কাগজপত্র ঠিক আছে, তাঁরা যাতে দ্রুত ঋণ পান, তা দেখা হচ্ছে।’’