উত্তরপ্রদেশের যুবক বাংলায় এসে বিস্ফোরণে মৃত। বিস্ফোরক ছিল তাঁর ব্যাগেই। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
সমাজমাধ্যমে আলাপ। সেখান থেকে উত্তরপ্রদেশের যুবকের সঙ্গে প্রেম উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা এক বধূর। ওই বধূ যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন, সেই বাড়িওয়ালার দাবি, উত্তরপ্রদেশে থেকে আগেও মধ্যমগ্রামে তাঁর ভাড়াটের ঘরে এসেছেন। থেকেওছেন উত্তরপ্রদেশের ওই যুবক, যাঁর নাম সচ্চিদানন্দ মিশ্র। তবে এ বার আর প্রেমিকার ঘরে ঢোকেননি। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১৬ অগস্ট বাংলায় আ়সেন সচ্চিদানন্দ। সে দিন ঘোরাফেরা করেছেন মধ্যমগ্রামেই। যে জায়গায় বিস্ফোরণ হয়েছিল, রাতে সেখানেই ঘুমিয়েছিলেন তিনি।
গত ১৭ অগস্ট, রবিবার গভীর রাতে বিস্ফোরণ হয় মধ্যমগ্রামে। বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে পাড়া। পুলিশ গিয়ে সচ্চিদানন্দের দেহ উদ্ধার করে। মনে করা হচ্ছে, ‘প্রেমিকা’র স্বামীকে খুনের লক্ষ্য নিয়ে মধ্যমগ্রামে এসেছিলেন উত্তরপ্রদেশের যুবক। কিন্তু অসাবধানতাবশত ব্যাগে থাকা বিস্ফোরক ফেটে তাঁর মৃত্যু হয়।
গত তিন দিনে এই মামলায় নানা তথ্য উঠে এসেছে। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সচ্চিদানন্দের ‘প্রেমিকা’কে। পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৬ অগস্ট (শনিবার) সন্ধ্যায় মধ্যমগ্রামে পা রাখেন সচ্চিদানন্দ। তবে তিনি কোনও হোটেলে ওঠেননি। মধ্যমগ্রামে ‘প্রেমিকা’র পাড়াতেই ঘোরাফেরা করেছিলেন তিনি। গত ১৬ অগস্ট সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১৭ অগস্ট রাত ১২টা ৫৮ পর্যন্ত মধ্যমগ্রামের বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন তদন্তকারীরা। সেখান থেকে পরিষ্কার,১৬ আগস্ট রাতে ‘প্রেমিকা’র বাড়ির কাছে ঘুমিয়েছিলেন ওই যুবক।
প্রশ্ন হল, সচ্চিদানন্দের ব্যাগে যে বিস্ফোরক ছিল, সেটা তিনি কোথা থেকে জোগাড় করেছিলেন? না কি নিজে তৈরি করেছিলেন? তা-ই যদি হয়, তবে বিস্ফোরক তৈরির প্রয়োজনীয় জিনিস কোথা এনেছিলেন? ভিন্রাজ্য থেকে না কি মধ্যমগ্রামে এসে জোগাড় করেছিলেন? খতিয়ে দেখা হচ্ছে, বিস্ফোরকে ডেটোনেটর, গান পাউডার ব্যবহার হয়েছিল কি না। এই সমস্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য এসটিএফের একটি বিশেষ দল হরিয়ানা যাচ্ছে। কারণ, সেখানে একটি কাচের কারখানায় চাকরি করতেন সচ্চিদানন্দ। পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশের বস্তী জেলায় যুবকের বাড়িতেও যাবেন তদন্তকারীরা। হাওড়া স্টেশনে নামার পর সচ্চিদানন্দের গতিপ্রকৃতি কেমন ছিল, জানতে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অন্য দিকে, যে মহিলার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এই ঘটনা বলে জানা যাচ্ছে, সেই মহিলাকে আটক করা হয়েছে। এখনও গ্রেফতার হননি তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বার বার দাবি করেছেন, ১৬ তারিখ সচ্চিদানন্দের আসার খবর জানতেন না। তাঁর স্বামীকে যদি খুন করার লক্ষ্য নিয়ে যুবক এখানে এসে থাকেন, সে খবর তাঁর অজানা ছিল। অর্থাৎ, প্রেমিকার সঙ্গে যোগসাজশ ছিল না বলে দাবি করেছেন ওই মহিলা।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, আগে একাধিকবার সচ্চিদানন্দ মধ্যমগ্রামে এসেছিলেন। প্রেমিকার স্বামীর অনুপস্থিতে তাঁদের বাড়িতে রাতও কাটিয়েছেন।
মধ্যমগ্রাম স্কুলের সামনে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন সচ্চিদানন্দের ‘প্রেমিকা।’ ওই বাড়ির মালিক গোবিন্দ চৌধুরী জানিয়েছেন, সচ্চিদানন্দকে তাঁর বাড়িতে আসতে দেখেছেন তিনি।
তবে ছেলের এই সম্পর্কের কথা তারা জানত না বলে দাবি করেছে সচ্চিদানন্দের পরিবার। মঙ্গলবার সকালে মধ্যমগ্রামে এসেছিলেন মৃতের বাবা অশ্বিনীকুমার মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘রবিবার রাতেই পুলিশ ফোন করে জানায় বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ছেলের। আমরা বারাণসীতে ছিলাম। কিছুই জানতাম না।’’