গ্রাফিক: শোভিক দেবনাথ।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৪০৪ জন করোনা আক্রান্ত হলেন রাজ্যে। আর গত চব্বিশ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪২ জনের। যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সংক্ষেপে এটিই শনিবার বঙ্গের করোনা-চিত্র।
এই পরিস্থিতিতে শয্যা সঙ্কট মেটানো-সহ কোভিড পরিষেবাকে গতিশীল করা নিয়ে এ দিন স্বাস্থ্য ভবনে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের পাশাপাশি শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম এবং স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিন্দম কর-সহ অন্তত পঞ্চাশ জন চিকিৎসক এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন বলে খবর।
গত কয়েক দিন ধরেই বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। বেসরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে কাদের এ কাজে যুক্ত করা হবে, তার একটি তালিকা তৈরি হয় বলে খবর। স্বাস্থ্য দফতরের প্রোটোকল মনিটরিং টিমে সেই সকল চিকিৎসকদের যুক্ত করার কথা ভাবা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে কী ধরনের প্রোটোকল স্বাস্থ্য দফতর তৈরি করেছে, সে সব নিয়ে এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কোভিড হাসপাতালে পরিদর্শনের পাশাপাশি সেফ হোমগুলিতেও যাবেন। ভর্তি প্রক্রিয়া ও রোগীদের দ্রুত ছুটি দিয়ে শয্যা খালির বিষয়েও তাঁরা পরামর্শ দেবেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রোটোকল মনিটরিং টিমে এখনও পর্যন্ত সরকারি চিকিৎসকেরাই যাচ্ছিলেন। আমরা বেসরকারি চিকিৎসকদেরও অংশীদারি চাইছি।’’
আরও পড়ুন: ন’কিলোমিটার পথ যেতে চাওয়া হল ন’হাজার টাকা! অ্যাম্বুল্যান্স-ভোগান্তি শিশুরও
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সরকারি উদ্যোগ প্রসঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কী বলছেন? ই এম বাইপাসের ধারে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘কোভিড হাসপাতাল এবং সেফ হোম দেখতে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কী, কবে এবং কোথায়, সে বিষয়ে সম্যক ধারণা নেই!’’ আর এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের মন্তব্য, ‘‘যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজে নামার মানসিকতা নিয়ে গিয়েছিলাম। স্বাস্থ্য ভবনে পৌঁছে দেখলাম, চার মাস পরে কোভিড ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।’’ তবে দেরিতে হলেও উদ্যোগ যে ভাল সে বিষয়ে একমত বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকেরা।
এরই মধ্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গ্রিন বিল্ডিংয়ের দু’টি ভিডিয়ো এ দিন প্রকাশ্যে এসেছে। প্রথম ১৫ সেকেন্ডের ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে ওয়ার্ডে একটাই প্রবেশ পথ। বড় ঘরের ডান দিকে বিছানার উপরে খালি গা-বারমুডা পরিহিত অবস্থায় বসে রয়েছেন প্রৌঢ়। কোনও পুরুষ রোগী আবার গায়ে জামা দেওয়ার তোয়াক্কা না-করে ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সেই ঘরেরই বাঁ দিকের অংশে রাখা হয়েছে কোভিড আক্রান্ত মহিলা রোগীদের। ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর পরিজন জানান, প্রকাশিত ভিডিয়োটি গ্রিন বিল্ডিংয়ের ছ’তলার। অভিযোগ, গ্রিন বিল্ডিংয়ের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে একই ছাদের তলায় কোভিড আক্রান্ত পুরুষ এবং মহিলা রোগীদের রাখা হলেও, দু’টি অংশের মধ্যে ন্যূনতম পর্দা নেই। ফলে অনেক মহিলা রোগীই অস্বস্তি বোধ করছেন। পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আলাদা শৌচাগার থাকলেও যাতায়াতের রাস্তা এক।
এ দিন কোভিড হাসপাতালের ভিতর থেকে দ্বিতীয় যে ১৭ সেকেন্ডের ফুটেজ প্রকাশ হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে শৌচাগারের অবস্থা শোচনীয়। চারটি শৌচাগারের মধ্যে তিনটি অত্যন্ত নোংরা। একটির দরজা ভাঙা। বেসিনেরও নোংরা জলে টইটম্বুর অবস্থা। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, ওই ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরজিকরের এক মহিলা ইন্টার্নও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনা সম্পর্কে অবহিত সরকারি চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসক তো কোভিড রোগীদের পরিষেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁকেও সেখানে রাখা হয়েছে কেন? শয্যার সঙ্কট মেটাতে গিয়ে কেন রোগীদের ন্যূনতম গোপনীয়তা রক্ষার দিকে নজর দেওয়া হবে না!’’
আরও পড়ুন: রাজ্যকে পাশ কাটিয়ে উপভোক্তার দোরগোড়ায় কেন্দ্র
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানান, গ্রিন বিল্ডিংয়ের পাঁচতলা এবং ছ’তলা’কে এইচডিইউয়ে পরিণত করা হয়েছে। সিসিইউ-এইচডিইউয়ে যে হেতু পুরুষ-মহিলা বলে আলাদা কিছু ভাগ থাকে না, এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ছ’তলায় এখনও কাজ বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ওই সমস্ত ওয়ার্ডে হাই-ফ্লো অক্সিজেন, এনআরবিএম পড়ে থাকা রোগীদেরই রাখা হবে। পুরুষ-মহিলা দেখতে গেলে সকলকে পরিষেবা দেওয়া যাবে না। মহিলাদের তুলনায় পুরুষ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সিসিইউ-এইচডিইউয়ে আলাদা ভাগ করতে গেলে মহিলারা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।’’
রোগীর পরিজনের পাল্টা বক্তব্য, প্রকাশিত ফুটেজে পুরুষ রোগীদের তো দেখে মনে হচ্ছে না তাঁরা কেউ মুমূর্ষু। এইচডিইউ সুলভ পরিকাঠামোও রয়েছে বলে চোখে পড়ছে না। উপাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘আগে প্লাস্টিক সার্জারি, ইউরো সার্জারির রোগীরাও ওখানে এ ভাবে থাকতেন। কোভিড বলে আলাদা কিছু করা হয়নি।’’
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে—পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড় পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)