কখনও ফোন যেত পরীক্ষার্থীদের কাছে। টাকার বিনিময়ে এ রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজে প্রস্তাব দেওয়া হত। আবার কখনও মফস্সল এলাকায় বিলি করা হতো লিফলেট। সেই লিফলেটের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে মিলত একই প্রস্তাব। প্রচারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল ভুয়ো ওয়েবসাইটও! পুলিশ সূত্রের খবর, এই ছকেই পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, তামিলনাড়ুর কয়েক জনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারণা চক্র।
তবে শেষ পর্যন্ত প্রতারকদের ভুলেই ফাঁস হয়ে গিয়েছে এই ছক। পুলিশ বলছে, বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য ভুয়ো ওয়েবসাইটে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের একটি ফোন নম্বর দিয়েছিল। কয়েক জন সেখানে ফোন করে ভর্তির কথা বলতেই বিষয়টি জানতে পারে স্বাস্থ্য দফতর। ঘটনার কথা ভবানীভবনে সিআইডি-কে জানিয়েছে তারা। চিঠি দেওয়া হয়েছে ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’ (এমসিআই)-কেও। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনা যে ফাঁস হয়েছে তা জানতে পেরেছে জালিয়াতেরাও। ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগের জন্য যে সব নম্বর দেওয়া হয়েছে, তাও বন্ধ।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রায় মাস দু’য়েক হল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের ওয়েবসাইটটি সংস্কারের জন্য বন্ধ রয়েছে। একমাত্র স্বাস্থ্য দফতর এবং ওই মেডিক্যাল কলেজের কর্মীরা নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড দিয়ে ঢুকতে পারবেন। এই সুযোগটাই নিয়েছিল প্রতারক চক্র। তারা দ্রুত বাঁকুড়া মেডিক্যালের একটি নকল ওয়েবসাইট খোলে। ওই ওয়েবসাইটে একাধিক মোবাইল নম্বরের পাশাপাশি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের এমন একটি আসল ল্যান্ডলাইন নম্বরও দেওয়া হয়েছিল। সেটাও সাময়িক ভাবে বিকল হয়েছিল।
বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থ প্রধানের সন্দেহ, খোঁজখবর নিয়ে জালিয়াতরা ওই নম্বরটি বেছেছিল। কারণ ওতে ফোন করে কেউ যোগাযোগ করতে পারবে না। সপ্তাহখানেক আগে ওই লাইনটি সারানোর পরে ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসতে শুরু করে। সেই সব ফোনে রাজস্থান, পঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, ঝাড়খণ্ড, দিল্লি থেকে লোকে ফোন করে ক’টি সিট খালি রয়েছে তা জানতে চান। ভর্তির জন্য একাধিক ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে তাঁদের ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা জমা দিতে বলা হয়েছিল। অন্তত ১৩ জন টাকা দিয়েও দিয়েছেন বলেও স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি করেছেন। কয়েক জন স্বাস্থ্য দফতরের কাছে লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছেন।
তাঁদেরই এক জন অজমেঢ়ের মহম্মদ সাকিব যেমন বলেন, ‘‘একদিন বিনোদ পাণ্ডে নামে এক জন ছেলের মোবাইলে ফোন করে জানান, বাঁকুড়া মেডিক্যালে ২৫টি সিট খালি হয়েছে। ভর্তি হতে হলে ধানবাদে একটা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৫ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে।’’ অন্ধ্রের বিজয়ওয়াড়ার শ্রীনাথ যেমন কোচিংয়ের বাইরে বিলি হওয়া লিফলেট থেকে এই চক্রের ফোন নম্বর পেয়েছিলেন। তাতে যোগাযোগ করলে রমেশকুমার সাই নামে এক জন রৌরকেলার একটি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে বলেছিলেন। তবে সাকিব বা শ্রীনাথ টাকা জমা দেননি। বাঁকুড়া মেডিক্যালে ফোন করে গোটা ঘটনা জানতে পেরেছেন।
এই ঘটনার তদন্ত নিয়ে কী বলছে সিআইডি?
ডিজি (সিআইডি) সুরজিৎ করপুরকায়স্থ বলেন, ‘‘অতীতেও এমন জালিয়াত চক্রের খোঁজ মিলেছিল। এক-একটি চক্রের ছক এক-এক রকম হয়। এদের রেয়াত করা হবে না। তদন্ত শুরু হয়েছে। পাকড়াও করার চেষ্টা চলছে।’’