পণ নয়, বরকর্তার আর্জিতে বৌভাতে রক্তদান

হাসিমুখে পাত্রপক্ষের সেই আবদার মেনে রক্তদাতার তালিকায় নাম লেখালেন নববধূর বাবা-মা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৭
Share:

রক্ত দিচ্ছেন পাত্রের শ্বশুর-শাশুড়ি। সোদপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

একমাত্র ছেলের বৌভাতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করল পাত্রপক্ষ। পাত্র সোদপুরের ঘোলার বাসিন্দা অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। কন্যাপক্ষের কাছে অঞ্জনের বাবার দাবি ছিল, কোনও রকম পণ লাগবে না। তবে অন্তত ২০ জন রক্তদাতা দিতে হবে! হাসিমুখে পাত্রপক্ষের সেই আবদার মেনে রক্তদাতার তালিকায় নাম লেখালেন নববধূর বাবা-মা।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয়ে এক সময় এলসিডি প্রজেক্টর, সিনেমা প্রজেক্টর চালাতেন ঘোলার সি ব্লকের গৌরাঙ্গতলা-রথতলার বাসিন্দা গণেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই পাত্রের বাবা। পরিবার পরিকল্পনা, ডটস, কুষ্ঠরোগ সংক্রান্ত সচেতনতামূলক ফিল্ম, স্লাইড চালানো ছিল তাঁর কাজ। অন্যকে সচেতন করার অভ্যাসটা তখনই তৈরি হয়। তা-ই বলে ছেলের বৌভাতে রক্তদান শিবির! সেটাই করেছেন গণেশবাবু। গত ১৮ নভেম্বর ক্যানিংয়ের পিয়ালির বাসিন্দা রূপা ভট্টাচার্যের সঙ্গে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয় গণেশবাবুর ছেলে অঞ্জনের।

রবিবার বৌভাতের আমন্ত্রণপত্রে রক্তদান শিবিরে যোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন পাত্রের বাবা। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে নবদম্পতির বসার মঞ্চ, খাওয়াদাওয়ার জায়গার পাশেই রক্তদান শিবির। মোট ২০০ জন আমন্ত্রিতের মধ্যে ৪৫ জন রক্ত দেন। খাদ্যতালিকায় ছিল এনার্জি ড্রিঙ্ক। কফি, বিস্কুট, ফল। তার পরে চিকেন বিরিয়ানি, মাটন কষা এবং মিষ্টি।

Advertisement

গণেশবাবু জানান, ছেলের জন্য অনেক দিন ধরে পাত্রী খুঁজছিলেন। এক দিন তাঁর ফোনে ভুল করে ফোন করেন রূপার মা শ্যামলী ভট্টাচার্য। আলাপের পরে পাত্রী আছে কি না, জানতে চান গণেশবাবু। নিজের বিবাহযোগ্যা মেয়ের কথা জানান শ্যামলীদেবী। দেখাশোনা করেই বিয়ে। গণেশবাবু বলেন, ‘‘পণ নেব কি না, জানতে চেয়েছিলেন মেয়ের মা। আমি বলি, ২০ জন রক্তদাতা দেবেন। তা হলেই হবে।’’ হাসতে হাসতে পাত্রের বাবা জানালেন, ২০ না-হলেও ১৭ জন রক্তদাতা এনেছিল কন্যাপক্ষ। রক্ত দেন শ্যামলীদেবী এবং তাঁর স্বামী বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যও।

ছেলের বিয়েতে এমন আয়োজন কেন? পাত্রের বাবা জানান, দু’বছর বয়সে বড় ছেলের মৃত্যুর পর থেকে তিনি সমাজসেবায় যুক্ত। অঞ্জনের উপনয়নেও তিনি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিলেন। গণেশবাবুর কথায়, ‘‘প্রতিটি বাড়ি যদি এ ভাবে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে, রক্তের সঙ্কট মিটবে। আমি বলেই দিয়েছিলাম, উপহার চাই না। রক্তদানে রাজি হলে সেটাই হবে উপহার।’’ বৌভাতে আমন্ত্রিত ছিলেন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ডি আশিস। তিনি বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে পাত্রপক্ষ-কন্যাপক্ষ যে-ভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করেছে, তা অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত।’’

‘‘বিয়ে অনেকেই করে। কিন্তু এমন বৌভাত ক’জনের হয়। দারুণ অনুভূতি,’’ বলছেন পার্ক স্ট্রিটে একটি শপিং মলের হিসাবরক্ষক অঞ্জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন