Abhishek Banerjee and Election Commission of India

এসআইআর নিয়ে কমিশনের বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে অভিষেক! ‘প্রমাণ’ আছে জানিয়ে সরাসরি হুঁশিয়ারি কোর্টে নিয়ে যাওয়ার

‘এসআইআর আতঙ্কে’ বিএলও-সহ সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যু এবং পরিকল্পনাহীনতার মতো পাঁচটি বিষয়ে কমিশনের উদ্দেশে তৃণমূলের ১০ সাংসদের প্রতিনিধিদল প্রশ্ন তুলেছিল। কমিশনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে তৃণমূল দাবি করেছিল, একটি প্রশ্নেরও সদুত্তর মেলেনি কমিশনের তরফে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:১৭
Share:

সোমবার মহেশতলায় ‘সেবাশ্রয় ২’-এর উদ্বোধনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

গত শুক্রবার থেকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তৃণমূলের মুখোমুখি সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল। শনিবার তাতে নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েনরা। ডেরেকরা যেখানে শেষ করেছিলেন, সোমবার সেখান থেকে শুরু করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশনের বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে নেমে পড়লেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা। হাতে ‘প্রমাণ’ রয়েছে দাবি করে কমিশনের উদ্দেশে বার্তা দিলেন, পারলে নির্বাচন সদন শুক্রবারের কথোপকথন প্রকাশ করুক। তার পর টানতে টানতে তিনি নির্বাচন কমিশনকে কোর্টে নিয়ে যাবেন।

Advertisement

‘এসআইআর আতঙ্কে’ বিএলও-সহ সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যু এবং পরিকল্পনাহীনতার মতো পাঁচটি বিষয়ে কমিশনের উদ্দেশে তৃণমূলের ১০ সাংসদের প্রতিনিধিদল প্রশ্ন তুলেছিল। কমিশনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে তৃণমূল দাবি করেছিল, একটি প্রশ্নেরও সদুত্তর মেলেনি কমিশনের তরফে। সোমবার অভিষেক বলেন, ‘‘পাঁচটা প্রশ্ন ছেড়ে দিন। কমিশন যদি প্রকাশ করতে পারে, একটি প্রশ্নেরও উত্তর তারা দিয়েছে, তা হলে টানতে টানতে কোর্টে নিয়ে যাব। আমাদের হাতে ডিজিটাল এভিডেন্স (ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণ) রয়েছে। আমি হাওয়ায় কথা বলি না।’’

তৃণমূলের ১০ সাংসদ কমিশনে গিয়েছিলেন শুক্রবার। ওই দিন রাতেই একাধিক সূত্রে কমিশনকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়, নির্বাচন সদন তৃণমূলকে ‘কড়া বার্তা’ দিয়েছে। এ-ও দাবি করা হয় যে, কমিশন তৃণমূলকে স্পষ্ট বলে দিয়েছে, আইন মানতেই হবে। এমনকি, তৃণমূল যাতে বিএলও-দের ‘চাপ’ না দেয়, তা-ও প্রতিনিধিদলকে বলে দেওয়া হয়েছে। সেই রাতেই অভিষেক দাবি করেছিলেন, কমিশনের কিছু লুকোনোর না-থাকলে তারা পুরো বৈঠকের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করুক! শনিবার ডেরেকরা দাবি করেন বৈঠকের পূর্ণাঙ্গ কথোপকথন প্রকাশের। আর সোমবার অভিষেক দাবি করলেন, তাঁর হাতে ‘ডিজিটাল প্রমাণ’ রয়েছে। তবে সেটি কী ধরনের প্রমাণ, তা স্পষ্ট করেননি লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা।

Advertisement

কমিশন সূত্রে শুক্রবার বলা হয়েছিল, বিএলও এবং ইআরও-দের অতিরিক্ত ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত নবান্নকেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ওই ভাতার অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি নবান্নের তরফে। সোমবার নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে স্বাস্থ্যশিবির ‘সেবাশ্রয় ২’ উদ্বোধনের পর মহেশতলায় সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিষেক পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছোড়েন কমিশনের উদ্দেশে। তিনি প্রথমে বলেন, ‘‘বাংলার যে বকেয়া রয়েছে, সে ব্যাপারে কমিশন চিঠি লিখুক কেন্দ্রীয় সরকারকে। বকেয়া অর্থের ৫০ শতাংশ কেন্দ্র দিলে বিএলও-দের অ্যাকাউন্টে ৬০ হাজার টাকা করে দেবে রাজ্য সরকার।’’ এর পরে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘‘কেন্দ্রকে টাকা দিতে হবে না। বাংলার প্রাপ্য দেওয়ার কথা বলে কমিশন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেও বিএলও-দের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পৌঁছে যাবে।’’

কেন্দ্রের কাছে কোনও রাজ্যের বকেয়া থাকলে তা পাইয়ে দেওয়ার কথা কি নির্বাচন কমিশন চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় সরকারকে বলতে পারে? তা কি কমিশনের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে? রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, অভিষেকও জানেন, কমিশন তা করতে পারে না। তিনি আসলে কমিশন এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে একই বন্ধনীতে ফেলার রাজনৈতিক ভাষ্য তৈরি করতে কৌশলে ওই কথা বলেছেন।

মোদীকে ‘নাটক’ জবাব

সোমবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই বিরোধীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংসদ নাটক (ড্রামা) করার জায়গা নয়। মহেশতলা থেকে প্রধানমন্ত্রীর ‘নাটক’ মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘বিএলও-রা মারা যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ আত্মঘাতী হচ্ছেন। এত মানুষের মৃত্যুকে ড্রামা বলছেন প্রধানমন্ত্রী! কে নাটক করছে গোটা দেশ দেখছে!’’

দু’মাস ধরে ‘সেবাশ্রয় ২’

সোমবার থেকে শুরু হওয়া স্বাস্থ্যশিবির ‘সেবাশ্রয় ২’ চলবে আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। প্রথমে প্রতিটি বিধানসভায় হবে সাত দিন করে হবে শিবির। সোমবার যা শুরু হয়েছে মহেশতলা থেকে। তার পরে ধাপে ধাপে মেটিয়াবুরুজ, বজবজ, বিষ্ণুপুর, ফলতা, সাতগাছিয়া হয়ে প্রকল্পটি শেষ হবে ডায়মন্ড হারবারে। ২২ জানুয়ারি ডায়মন্ড হারবারের শিবির শেষ। ২৩ জানুয়ারি সরস্বতী পুজো এবং নেতাজি জয়ন্তীর জন্য ফাঁকা রাখা হবে। তার পরে ২৪-২৮ জানুয়ারি হবে সব বিধানসভায় ‘ফলোআপ ক্যাম্প’। চলতি বছরের গোড়ায় ‘সেবাশ্রয়’ শুরু করেছিলেন অভিষেক। সেই পরিকাঠামো ছিল চোখধাঁধানো। এ বার যে তা আরও মজবুত করা হয়েছে, তা দৃশ্যতই স্পষ্ট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement