ব্যক্তি বিশেষ নয়, সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা মনে করছেন— অভিযুক্ত ১৩ জন মন্ত্রী-সাংসদ ও পুলিশ-কর্তা সংগঠিত একটি ঘুষ-চক্রেরই অংশ। ম্যাথু স্যামুয়েলের সম্পাদিত ও অসম্পাদিত ফুটেজ কাটাছেঁড়া করে এ বিষয়ে এক রকম নিশ্চিত হয়েছেন সিবিআই অফিসারেরা।
তদন্তকারীদের কথায়— অসম্পাদিত ফুটেজের একটি অংশে দেখা গিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতা নিবাসী এক মন্ত্রী কলকাতা পুরসভার এক কর্তাকে বলছেন, ‘‘প্রায় প্রতিদিনই তো আমার দফতরের নানা নির্মাণ কাজের বরাত দেওয়া হচ্ছে। তুমি বরাত নাও, নির্মাণ কাজ শুরু কর। এখন আমাদের সময়, যত পারো লুটে নাও!’’
আবার কলকাতা পুরসভার এক মাথা তথা মন্ত্রী নিজের অফিসেই তোয়ালে দিয়ে টাকার বান্ডিল মুড়তে মুড়তে বলছেন, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রীর সব বিষয়ই দেখভাল করি। আপনার কাজ হয়ে যাবে।’’ অসম্পাদিত ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ওই মন্ত্রী পরে বিদেশি মু্দ্রায় নজরানা দেওয়ার জন্যও ম্যাথুকে অনুরোধ করেছেন। এ ক্ষেত্রে একেবারে সরকারি দফতরে বসেই ঘুষের টাকা লেনদেন হয়েছে।
সিবিআই সূত্রে খবর, উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা এক সাংসদ ম্যাথুর কাছ থেকে সরাসরি টাকা নেননি। অন্য জেলার এক পুলিশ কর্তাকে টাকাটা দেওয়ার জন্য ম্যাথুকে বলেছিলেন তিনি। পুলিশ কর্তাও ম্যাথুর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘‘দাদা (ওই সাংসদ)-র এই সব বিষয় আমিই দেখাশোনা করি!’’ পুলিশ কর্তা ও সাংসদের যোগসাজস দেখে সিবিআই কর্তারা তাজ্জব বনে গিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে ঘুষ-চক্রে আমলা ও জনপ্রতিনিধির যোগসাজসও স্পষ্ট।
এক তদন্তকারীর কথায়, সম্পাদিত ফুটেজেই দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা এক মন্ত্রী ম্যাথুকে বলেছেন, ‘‘পাঁচ লাখ টাকা তো আমার ছেলেরা নেয়। আমি এতো কম টাকায় হাত দিই না। আপনি এক তলার ঘরে অফিসের ছেলেদের কাছে ওই টাকা জমা করে দিন।’’ তদন্তকারীদের ব্যাখা— এ ক্ষেত্রে শুধু মন্ত্রী নন, তাঁর অনুগামীরাও যে ঘুষের টাকা নেন, তা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। এক কর্তার কথায়, প্রয়োজনে মন্ত্রীর অফিসের ওই ‘ছেলেদের’ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখার পরে সম্প্রতি সাংবাদিক ম্যাথুকেও জেরা করা হয়েছে। তাঁদের দাবি, ঘুষের জোরে সরকারি সাহায্য পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে ওই সব মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে মামলা করার যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ তাঁরা সংগ্রহ করছেন। এক অফিসারের কথায়— আপাতত ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও পরবর্তী পর্যায়ে অভিযুক্তের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসাটা এখন সময়ের অপেক্ষা!’’