দলের সাংগঠনিক নির্বাচনের মঞ্চে নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের দাঁড় করিয়ে কয়েক দিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, এঁদের কিচ্ছু হবে না!
আপাত ভাবে তাতে রাজ্যের শাসক দলের অনেকের মনে হয়েছিল, অভিযুক্তদের পাশেই বুঝি রইলেন দলনেত্রী। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, সেই আশ্বাসবাণীতে আস্থা না রেখে পৃথক ভাবে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে নেমে পড়লেন অভিযুক্ত মন্ত্রী-সাংসদদের একাংশ! আবার অভিযুক্তদের সরকার ও সংগঠনের দায়িত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার দাবি নিয়েও দলের অন্দরে সক্রিয় হয়ে উঠলেন তৃণমূলের কিছু নেতা।
সূত্রের খবর, গত শুক্রবার তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচন-পর্ব মেটার পরেই সন্ধ্যায় দিল্লি চলে গিয়েছিলেন নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত এক নেতা। সিবিআইয়ের এফআইআর-কে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় কি না, সে ব্যাপারে তিনি পরামর্শ করেন বিশিষ্ট আইনজীবীদের সঙ্গে। সূত্রের খবর, দিল্লিতে তিনি যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গেও। কিন্তু জেটলি এই মুহূর্তে আমেরিকায়। তাই ফোনেই তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
দলের ওই শীর্ষ নেতা সক্রিয় হওয়ার আগেই দিল্লি গিয়ে বিজেপির এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে দেখা করে সমঝোতার চেষ্টা করে এসেছেন নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক দফতরের দায়িত্বে থাকা এক মন্ত্রী। তিনি দিল্লিতে দেখা করেছিলেন প্রাক্তন আরএসএস প্রচারক তথা বর্তমানে বিজেপির কেন্দ্রীয় সংগঠনে অমিত শাহের অন্যতম আস্থাভাজন নেতা রাম মাধবের সঙ্গে।
তৃণমূলের অপর এক মন্ত্রী মঙ্গলবার আবার লখনউয়ে গিয়ে বিজেপি নেতা তথা উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করেন। সূত্রের খবর, নারদবিদ্ধ এক মন্ত্রী, এক সাংসদ এবং নিজের ব্যাপারে রফাসূত্রের সন্ধানে ওই মন্ত্রী এ দিন সিদ্ধার্থের সঙ্গে কথা বলেন। সিদ্ধার্থ ওই নেতাকে বিজেপি শীর্ষ নেতা রামলাল ও ভূপেন্দ্র যাদবের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়েও দেন। তবে সূত্রের মতে, সেই দৌত্যে খুব বেশি আশার আলো দেখা যায়নি।
এখন প্রশ্ন হল, অমিতেরা বলছেন অভিযুক্তদের বিজেপি-তে নেওয়া হবে না। আবার অন্য দিকে বিজেপি নেতারাই নারদে অভিযুক্তদের দেখা করার সময় দিচ্ছেন। বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিচ্ছেন। এই দ্বিচারিতা কেন? রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এখনই বিজেপি-তে না নিলেও এঁদের রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে বিজেপি।
এই পরিস্থিতিতে নারদ অভিযুক্তদেরও সংগঠন ও সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন করার দাবিও তৃণমূলে জোরালো হচ্ছে। কোচবিহারে এ দিন কামতাপুরী পিপলস পার্টির সভায় গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেপিপি-র সঙ্গে তৃণমূলের সমঝোতার অন্যতম কারিগর হলেন মুকুল রায়। কিন্তু তাঁকেই ওই সভায় ডাকেননি দলনেত্রী!
দলীয় সূত্রে খবর, দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর দাবিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ নেতারা। দলের এক সূত্রের মতে, সম্ভবত এই কারণে মন্ত্রিসভা ও সাংগঠনিক রদবদল পিছিয়ে দিয়েছেন মমতাও।