—ফাইল চিত্র।
বাসের স্বাস্থ্য এবং দূষণমাত্রা খতিয়ে দেখে মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশের পরেই বসে যাওয়া বাসগুলিকে ফের কলকাতার রাস্তায় নামাতে তৎপরতা শুরু করেছে বাসমালিকদের সংগঠনগুলি। এ বার তারা নিষেধাজ্ঞার কারণে বসে যাওয়া বাসগুলির জরিমানা ও করছাড়ের আবেদন জানাতে চলেছে। বাসমালিক সংগঠনগুলির দাবি, পরিবহণ দফতর তাদের এই আবেদন মেনে নিলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ৭০০ থেকে ৮০০ বাস যাত্রীপরিষেবা দিতে ফের রাস্তায় নামবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশিকার ভিত্তিতে বৃহত্তর কলকাতা মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) এলাকায় ১৫ বছরের পুরনো বাসের পারমিটের নবীকরণ বন্ধ করে দিয়েছিল পরিবহণ দফতর। সেই নিষেধাজ্ঞার কারণে বহু বাস বাতিল হতে বসেছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ মাস আগে বাস বাতিল করার ক্ষেত্রে সেটির আয়ু নয়, স্বাস্থ্যকে মাপকাঠি হিসাবে ধরার দাবি জানিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় বেসরকারি বাসমালিকদের ছ’টি সংগঠন।
সম্প্রতি এই মামলায় বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে বিচারপতি রাই চট্টোপাধ্যায় বাসের স্বাস্থ্য এবং দূষণমাত্রা খতিয়ে দেখে মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। হাই কোর্টের এই নির্দেশকে ‘ঐতিহাসিক জয়’ বলে দাবি করেছেন বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনের নেতৃত্ব। আদালতের নির্দেশের ফলে প্রায় ৭০০-৮০০ বাস কলকাতা শহর এলাকায় যাত্রীপরিষেবা দেওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, ওই সমস্ত বাসকে বছরে দু’বার স্বাস্থ্য এবং দূষণ সংক্রান্ত পরীক্ষা দিতে হবে। সেই পরীক্ষায় দূষণমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকা ছাড়াও বাসের অন্যান্য যন্ত্রাংশ ঠিক থাকা জরুরি। তার ভিত্তিতেই বাস রাস্তায় চলাচলের ছাড়পত্র পাবে।
কিন্তু এই ছাড়পত্র পেতে বাস পিছু দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে বাসমালিকদের। কিন্তু এই দুই বছর ওই বাসগুলি না চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বাসমালিকেরা, এমনটাই দাবি তাঁদের। তাই আগামী সপ্তাহে পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী এবং পরিবহণ দফতরের সচিব সৌমিত্র মোহনের কাছে এই মর্মে আবেদন জানাতে চলেছেন সিটি সাবারবান বাস সার্ভিসের নেতা টিটু সাহা। তিনি বলেন, ‘‘এই রায় আমাদের কাছে অবশ্যই স্বস্তির। কিন্তু তার চেয়ে বেশি স্বস্তি পাব, যদি পরিবহণ দফতর আমাদের দাবি মেনে নেয়। কারণ, আদালতের নির্দেশের জন্য বাসগুলি ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও আমরা চালাতে পারিনি। তাই আমাদের বিস্তর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যদি পরিবহণ দফতর আমাদের আবেদন স্বীকার করে নেয়, তাহলে আমরা পরিবহণ দফতরের কাছে যেমন কৃতজ্ঞ থাকব, তেমনই যাত্রী পরিষেবাতেও সাধারণ মানুষকে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারব।’’
২০০৮ সালে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বৃহত্তর কলকাতা এলাকায় দূষণ কমাতে ১৫ বছর মেয়াদে নির্দিষ্ট নির্গমন-মাত্রার গাড়ি বাতিল করার কথা বলেছিল। সেখানে দূষণমাত্রার উল্লেখ ছিল না বলে খবর। বাসের প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দূষণমাত্রা কমার বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই বাসমালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। ওই দাবিকে নীতিগত সমর্থন জানানোর বার্তা নবান্ন ছাড়াও পরিবহণ দফতর থেকে দেওয়া হয়েছিল। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস নিজেও বাসের মেয়াদ বৃদ্ধি নিয়ে একাধিক বার সরব হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বৈঠকে পরিবহণমন্ত্রীকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহণ দফতরও এ নিয়ে পুরনো নির্দেশিকা সংশোধনের কথা আদালতের কাছে জানায়। ১৯৮৯ সালের কেন্দ্রীয় পরিবহণ আইনের সঙ্গে সংঘাত এড়িয়ে নির্দেশিকায় প্রয়োজনীয় বদল আনার কথা বলা হয়। শেষ পর্যন্ত সব পক্ষের সম্মতিতে বাসের মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত মামলায় সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাধান বার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন মামলাকারীদের প্রতিনিধি অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায়।