কলকাতায় এসে বিধাননগরে বিজেপির নতুন রাজ্য দফতরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই সফরে বুধবার পর্যন্ত শাহের থাকার কথা শহরে।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) মাঝে কলকাতায় এসেই রাজ্যে সরকার গড়া নিয়ে দলীয় বৈঠকে ‘প্রত্যয়ী’ সুর শোনালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রায় ৪৮ ঘণ্টার সফরের শুরুতে সোমবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে নেমে সোজা বিধাননগরের দলীয় দফতরে চলে যান শাহ। সেখানে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দু’ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠক চলেছে। সূত্রের খবর, সেখানেই বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গড়ার আশা দেখিয়েছেন শাহ। তাঁর বক্তব্য, সরকার গঠন হবে ধরে নিয়েই যাবতীয় আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গেই বুথ রাজনীতির অভিজ্ঞতা তিনি তুলে ধরেছেন নেতাদের সামনে। সূত্তের খবর, সেই সঙ্গেই মতুয়াদের নাগরিকত্ব ও ভোটার তালিকায় নাম রাখা নিয়ে সঙ্কট নিরসনে কিছু ‘ইতিবাচক’ বার্তাও মিলেছে প্রাথমিক আলাচনায়।
বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির হেঁশেলের কাজে পুরোপুরি ঢুকে যাওয়ার পাশাপাশিই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সমাজমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ পরিবর্তনের জন্য সম্পূর্ণ রূপে প্রস্তুত। তিন দিনের পশ্চিমবঙ্গ সফরে কলকাতায় পৌঁছেছি। বিমানবন্দরে কর্মী-সমর্থকদের ভালবাসায় অভিভূত!’’ তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘‘আগামীকাল (মঙ্গলবার) বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের কোর গ্রুপের বৈঠকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। পরের দিন রাজ্যের বিজেপি সাংসদ ও বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করব এবং কলকাতা মহানগরের উদ্যমী ও শক্তিশালী দলীয় কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করব।’’
সূত্রের খবর, শাহের উপস্থিতিতে এ দিন দু’দফায় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ধন্ড, পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল, পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে, সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়, নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ভূপেন্দ্র যাদব এবং সহকারী বিপ্লব দেব। বৈঠকে প্রচার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। শাহের পরামর্শ, অনুপ্রবেশ, জনবন্যাসের বদল, ধর্মীয় উৎপীড়ন, তোষণের রাজনীতির অভিযোগের পাশাপাশি প্রচারে বিকল্প ‘উন্নয়নের মডেল’ তুলে ধরতে হবে। শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য, সড়ক পরিবহণ, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প, গরিব মানুষের জন্য স্বনিযুক্তি প্রকল্প, মহিলা ক্ষমতায়ন এবং পরিযায়ী ঠেকাতে রাজ্যে কর্মসংস্থানের বিষয়ে জোর দিতে হবে প্রচারের ভাষ্যে। সূত্রের খবর, তারই সঙ্গে নিচু তলায় কাজ করার কিছু কৌশলও বঙ্গের নেতাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন শাহ। জোর দিতে বলেছেন তৃণমূল স্তরের সংগঠনে।
অনুপ্রবেশকারী, জনবিন্যাস বদল নিয়ে রাজ্যের নেতারা শাহের কাছে অভিযোগ করেছেন। সেই সঙ্গে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়া এবং ভোটার তালিকায় নাম তোলার বিষয়টিও শাহের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, এই বিষয়ে শাহের তরফে ‘ইতিবাচক’ ইঙ্গিত মিলেছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে (সিএএ) আবেদনের পরেও যাঁদের এই সময়ের মধ্যে নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব হবে না, তাঁদের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ‘অনুসন্ধানে’র ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে কোনও সম্মতির ছাড়পত্র দেওয়া যায় কি না, সেই নিয়েও ভাবনা-চিন্তা রয়েছে বলে সূত্রের দাবি। বৈঠক থেকে বেরিয়ে সুকান্ত বলেছেন, ‘‘এ বার তৃণমূলের দম বন্ধ হয়ে আসা শুরু হল! শাহ বাংলা নিয়ে কী ভাবছেন, এই সফরে সেটা স্পষ্ট করে দিয়ে যাবেন।’’ শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘বাংলায় পরিবর্তন না-হলে দেশ বাঁচবে না। দেশ বাঁচাতে বাংলাকে বাঁচাতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই কথাই বলেছেন।’’
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের অবশ্য কটাক্ষ, “ভোট এলেই এঁরা নিত্যযাত্রী হন। ফল, বাংলা-বিরোধী বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রত্যাখ্যান। আর ওঁদের রণকৌশলের অর্থ, গামছার ইচ্ছা হয় ধোপার বাড়ি যাওয়া!”
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে