ভাঙড়ে এক মঞ্চে আরাবুল-রেজ্জাক

আরাবুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর মুখ দেখাদেখি ইদানীং তো ছিলই না। উল্টে কয়েক দিন আগেও আরাবুল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওঁর ব্যাটারিতে চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছে!’’ সোমবার সেই আরাবুলের হাত ধরেই ভাঙড়ে ঘুরলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের উদ্যানপালন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা। যা দেখে প্রশাসনের কর্তারা তো বটেই, তৃণমূলের নেতারাও হতবাক!

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

ভাঙড় শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:২০
Share:

লড়াই থামিয়ে এখন হাতে হাত। ভাঙড়ে রেজ্জাক মোল্লা এবং আরাবুল ইসলাম। — নিজস্ব চিত্র

আরাবুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর মুখ দেখাদেখি ইদানীং তো ছিলই না। উল্টে কয়েক দিন আগেও আরাবুল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওঁর ব্যাটারিতে চার্জ ফুরিয়ে গিয়েছে!’’ সোমবার সেই আরাবুলের হাত ধরেই ভাঙড়ে ঘুরলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের উদ্যানপালন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা। যা দেখে প্রশাসনের কর্তারা তো বটেই, তৃণমূলের নেতারাও হতবাক!

Advertisement

এ দিন ভাঙ়ড়-২ ব্লক অফিসে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন দফতরের উদ্যোগে কৃষকদের নিয়ে এক অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন দফতরের মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলাম। দু’জনে হাত ধরে সব স্টলে ঘোরার পর মঞ্চে পাশাপাশি চেয়ারে বসেন। তার পর কানে কানে দীর্ঘ আলোচনা চলে ভাঙড়ের বর্তমান ও প্রাক্তন বিধায়কের।

সরকারি এই অনুষ্ঠান বিকেল তিনটেয় শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রেজ্জাক ও আরাবুল দু’জনেই ব্লক অফিসে পৌঁছে যান আধ ঘণ্টা আগে। আরাবুলের ঘরে বসে চা খান রেজ্জাক। তার পর দোতলার সিঁড়ি বেয়ে হাত ধরে তাঁকে নামিয়ে আনেন আরাবুল। এমনকী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময়েও আরাবুলের সঙ্গে খুনসুটি করেন রেজ্জাক। বলেন, ‘‘আরাবুলের অনেক টাকা রয়েছে। একটা পেট্রোল পাম্পের মালিক আরাবুল। সে জন্য একটা হিমঘর তৈরি করতে ওঁকে অনুরোধ করছি।’’ রেজ্জাকের এ কথা শুনে আরাবুল বলেন, ‘‘দাদা আপনি টাকা দিন। আমি হিমঘর করব।’’

Advertisement

কিন্তু হঠাৎ কেন এই ভোলবদল?

দলের অনেকের মতে, ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষের আন্দোলনের পর থেকেই এলাকায় রাজনীতির জমি হারিয়েছেন আরাবুল ও রেজ্জাক। দলের ওই অংশের দাবি, ভাঙড়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার জন্য এই দু’জনই দায়ী। বিশেষ করে আরাবুলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছিলেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। অভিযোগ, প্রোমোটার ও আবাসন ব্যবসায়ীদের জন্য ভাঙড়ের কৃষকদের উপর জোর করে বা তাঁদের থেকে কম টাকায় জমি হাতিয়ে নেওয়ার নেপথ্যে ছিলেন আরাবুল। আবার আরাবুলের বিরুদ্ধে দলের একাংশকে গত এক বছর ধরে ক্রমাগত উস্কানি দিচ্ছেন রেজ্জাক। ভাঙড়ে অশান্তির পিছনে সেটাও একটা বড় কারণ বলে মনে করেন তৃণমূল নেতারা। তাই ভাঙড়ে ইদানীং রেজ্জাক মোল্লাকে যেতেই নিষেধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি ভাঙড়ে তৃণমূলের সভাতেও ডাকা হয়নি রেজ্জাক-আরাবুলকে।

তৃণমূল সূত্রের মতে, ওই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আরাবুল বিরোধী কাইজার আহমেদ এখন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছেন। বিধানসভা নির্বাচন পর্বে আরাবুল রেজ্জাক মোল্লার বিরোধিতা করে মাঠে নেমেছিলেন। ওই সময় কাইজার রেজ্জাকের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনের পর কাইজারও রেজ্জাককে এড়িয়ে চলছেন। তা ছাড়া ভাঙড় ১-র নেতা কাইজার আরাবুলের গড় দখলেও উদ্যোগী হয়েছেন। ফলে রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই রেজ্জাক-আরাবুল এখন হাত মিলিয়েছেন।

তবে আরাবুলের সঙ্গে ‘সন্ধি’ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রেজ্জাক বলেন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তো থাকবেনই। এতে কোনও রাজনীতি নেই।’’ অন্য দিকে আরাবুলের বক্তব্য, ‘‘রেজ্জাক সাহেব মন্ত্রী। আমাদের নেতা, বিধায়ক। সরকারি অনুষ্ঠান ছিল। আমরা একসঙ্গে ছিলাম। এর বাইরে আর কিছুই নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন