ভারত থেকে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ হওয়া সোনালি খাতুন কি দেশে ফিরতে পারবেন? —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
বাংলাদেশের জেলে বন্দি বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুনকে আইনত অভিযুক্ত করার দিকে এগোচ্ছে সে দেশের আদালত। সোনালি-সহ মোট চার জনের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে চার্জ গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। অক্টোবরের শেষের দিকে সোনালিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানির দিন ধার্য্য করছে বাংলাদেশের আদালত।
বীরভূমের বাসিন্দা সোনালি কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকতেন। গত জুন মাসে বাংলাদেশি সন্দেহে সোনালি-সহ মোট ছয় জনকে পাকড়াও করে দিল্লি পুলিশ। তার পরে অসম সীমান্ত দিয়ে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। ওই ‘পুশ ব্যাক’-এর পর থেকে তাঁরা বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জেলে বন্দি রয়েছেন। এখনও জামিন মেলেনি তাঁদের। ইতিমধ্যে কলকাতা হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, সোনালিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। এর জন্য কেন্দ্রকে সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।
এরই মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সরকারি আইনজীবী মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ শনিবার পিটিআইকে বলেন, “সোনালি খাতুন এবং আরও তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানির জন্য ২৩ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল হক। তাঁরা গত চার মাস ধরে জেলে বন্দি রয়েছেন।”
তবে সোনালিদের আইনত অভিযুক্ত করার বিষয়টি যে একটি নিয়মমাফিক আইনি প্রক্রিয়া হয়েই থেকে যেতে পারে, সেই আভাসও দিয়েছেন বাংলাদেশের সরকারি আইনজীবী। ওয়াদুদের বক্তব্য, শুনানির সময়ে যদি তাঁরা (সোনালিরা) অভিযোগ স্বীকার করে নেন, তবে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর পথ প্রশস্ত হবে। সোনালিদের অভিযোগ স্বীকার করার ‘সম্ভাবনা’ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সোনালিরা বাংলাদেশে‘পুশ ব্যাক’ হওয়ার পরে তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয় পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ। হাই কোর্টে মামলা করেন তাঁদের পরিজনেরাও। বাংলাদেশি সন্দেহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশের ওই ছ’জনকে আটক করা ও বিতাড়নের সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট। গত ২৬ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, ওই ছ’জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বাংলাদেশের আদালতে চার্জ গঠনের শুনানি প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেন, “পুশ ব্যাক হয়ে যাওয়া সোনালি খাতুন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে ২৫-২৬ অক্টোবরের মধ্যে। তাই ২৩ অক্টোবরের আগেই যাতে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনে সেই আশা করছি। আমরা আশা করব, বাংলাদেশে কোনও সমস্যা হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের ভারতে ফিরিয়ে আনবে।”
গত শুক্রবারই জানা যায়, সোনালিদের দেশে ফেরানোর জন্য ভারতীয় হাইকমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত নির্দেশের একটি প্রতিলিপি প্রকাশ্যে আসে। যদিও বিদেশ মন্ত্রক থেকে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। এরই মধ্যে শনিবার বাংলাদেশের চাঁপাইগঞ্জ জেলার মুখ্য সরকারি আইনজীবী জানালেন, আগামী ২৩ অক্টোবর সোনালিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের শুনানি রয়েছে।