শনিবার উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। ছবি: পিটিআই।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও মসৃণ করতে চায় আফগানিস্তানের তালিবান সরকার। আগামী দিনে ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে আরও ঘন ঘন এমন সফর দেখতে চায় কাবুল। শনিবার, ভারত সফরের তৃতীয় দিনে সেই বার্তাই দিলেন আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। শুক্রবার দিল্লিতে আফগান দূতাবাসে মুত্তাকির সাংবাদিক বৈঠকে মহিলা সাংবাদিকদের প্রবেশ ‘নিষিদ্ধ’ হওয়াকে ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধে। এই বিতর্কের মাঝে দিল্লির সঙ্গে বন্ধুত্ব দৃঢ় করার বার্তা দিলেন আফগান মন্ত্রী।
শনিবার উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে ইসলামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ পরিদর্শনে যান তালিবান নেতা। তালিবান নেতাদের কাছে ১৮৬৬ সালে তৈরি হওয়া এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের আকোরা খট্টক শহরে রয়েছে ‘দারুল উলুম হাক্কানিয়া’ নামে একটি ইসলামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উত্তরপ্রদেশের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আদলেই সেটি তৈরি হয়েছিল। ‘দারুল উলুম হাক্কানিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা আবদুল হক দেশভাগের আগে দেওবন্দ থেকেই পড়াশোনা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন তালিবান নেতা এই ‘দারুল উলুম হাক্কানিয়া’য় পড়াশোনা করেন।
সাহারানপুরের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে তালিবান মন্ত্রী বলেন, “আমরা নতুন কূটনীতিকদের এখানে (ভারতে) পাঠাব। আশা করি, আপনারাও কাবুল সফরে যাবেন। দিল্লিতে আমাকে যে ভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে, তাতে আমার আশা, ভবিষ্যতে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। অদূর ভবিষ্যতে ঘন ঘন এই ধরনের সফর দেখা যেতে পারে।”
শনিবার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সড়কপথেই দিল্লি থেকে সাহারানপুরে পৌঁছোন আফগান বিদেশমন্ত্রী। দারুল উলুম দেওবন্দে পুষ্পবৃষ্টিতে স্বাগত জানানো হয় তাঁকে। তালিবান নেতাকে স্বাগত জানানো উপস্থিত ছিলেন, দারুল উরুল দেওবন্দের উপাচার্য আবুল কাসিম নোমানি, জামিয়াত উলেমা-ই-হিন্দের সভাপতি মৌলানা আরশাদ মাদানি এবং অন্য আধিকারিকেরা। শনিবার তাঁর সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রচুর পড়ুয়া এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হয়েছিলেন। তবে মুত্তাকি পর্যন্ত পৌঁছোনোর আগেই নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁদের আটকে দেন। এই অভ্যর্থনা দেখে সাংবাদিকদের উদ্দেশে মুত্তাকি বলেন, “এই ব্যাপক অভ্যর্থনা এবং এখানকার মানুষের ভালবাসা পেয়ে আমি ধন্য। আমি আশা করি ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।”
গত শুক্রবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর দিল্লিতে আফগান দূতাবাসে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। কিন্তু ওই সাংবাদিক বৈঠকে কোনও মহিলা সাংবাদিককে দেখা যায়নি। যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই পুরুষ। একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, মহিলা সাংবাদিকদের সেখানে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যমে সরব হন অনেক সাংবাদিক। তার পরেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হয়। সুর চড়ায় কংগ্রেসও। তালিবান আফগানিস্তানে যে গোঁড়া, রক্ষণশীল, লিঙ্গবৈষম্যমূলক শাসনব্যবস্থা চালায় বলে অভিযোগ, তার প্রতিফলনই ভারতে দেখা গেল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। বিতর্কের মুখে শনিবার একটি বিবৃতি দিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানায়, বিষয়টিতে তাদের কোনও হাত নেই।