বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসছে ১২০০ টন ইলিশ। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
দুর্গাপুজো উপলক্ষে ভারতে ১২০০ টন ইলিশ মাছ রফতানির সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার সে দেশের বাণিজ্য মন্ত্রকের তরফে এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে বাংলাদেশের কোন কোন বাণিজ্যিক সংস্থা কত পরিমাণ ইলিশ ভারতে রফতানি করতে পারবে। গত ৮ সেপ্টেম্বরের বিবৃতিতে ভারতে ইলিশ রফতানিতে আগ্রহী সংস্থাগুলির কাছ থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছিল। জমা পড়া আবেদন খতিয়ে দেখার পর ৩৭টি সংস্থাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
কোন সংস্থা কত টন ইলিশ রফতানি করতে পারবে, তা স্পষ্ট ভাবে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কোনও সংস্থা ৩০, কোনও সংস্থা ৪০ আবার কোনও সংস্থা সর্বোচ্চ ৫০ টন ইলিশ রফতানি করতে পারবে। বিজ্ঞপ্তিতে এ-ও বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট শর্ত মেনে চলতে হবে নির্বাচিত সংস্থাগুলিকে। তবে শর্তগুলি কী, তা উল্লেখ করা হয়নি।
বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশের, বিশেষ করে পদ্মার ইলিশের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। পুজোর মরসুমে চাহিদা আরও বাড়ে। সে কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে ভারতের ‘ফিশ ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে সৈয়দ আনওয়ার মাকসুদ বলেন, “উৎসবের মরসুমে ইলিশ পাঠানোর জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিলাম। বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে। সে কারণে আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশের জাতীয় রফতানি নীতি (২০১৫-১৮) অনুসারে, শর্তসাপেক্ষে রফতানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে ইলিশ। তবে বিদেশে ইলিশ রফতানির প্রথম অনুমতি দেওয়া হয় ২০১৯ সালে। তখন থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পুজোর সময়ে ভারতে ইলিশ পাঠানো হত। শেখ হাসিনার সরকার ইলিশ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও দুর্গাপুজোর সময়ে ভারতে ইলিশ রফতানি হয়ে আসছে গত বেশ কয়েক বছর ধরে। গত বছরের পুজোর মরসুমে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক প্রথমে প্রায় ৩,০০০ টন ইলিশ ভারতে রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু পরে তা কমিয়ে ২,৪২০ টন ইলিশ ভারতে পাঠানোর অনুমতি দেয় মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। এ বার তা আরও কমিয়ে ১,২০০ টন রফতানির অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। প্রতি কেজি ইলিশ ন্যূনতম সাড়ে ১২ ডলারে (ভারতীয় মুদ্রায় ১০৫৭ টাকা) রফতানি করা যাবে বলে জানানো হয়েছে।
গত বছর হাসিনার সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রফতানিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। ইউনূস প্রশাসন প্রথমে জানিয়েছিল, উৎসবের মরসুমে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ রাখা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছিল। নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ নেই বলেও জানিয়েছিল মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার। যদিও পরে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দেয় তারা। পরবর্তী সময়ে ইউনূস সরকার এ-ও জানিয়েছিল, ইলিশের মতো ‘ক্ষুদ্র ইস্যু’ ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলবে না।