বিশেষ প্রশিক্ষকের দেখা মেলে না স্কুলে

আসানসোল ও বারাবনির ওই দুই স্কুলের দুই ছাত্রীর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। জেলার বহু স্কুলেই এ রকম বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বেশ কিছু পড়ুয়া রয়েছে। তাদের নিয়ে মাঝেমধ্যেই সমস্যায় পড়েন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

দৃশ্য ১: ক্লাসের অন্য পড়ুয়ারা যখন খাবার খেতে ব্যস্ত, তখন সামনে মিড-ডে মিলের খাবারের থালা সামনে রেখে অসহায় চোখে তাকিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির মেয়েটি। ভাতের গ্রাস মুখে তুলতে পারছিল না সে। ক্লাসঘরের সামনে এসে তা নজরে পড়ে আসানসোলের শিশুভারতী বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা অনিতা ভট্টাচার্যের। মেয়েটিকে ভাত মেখে খাইয়ে দিলেন তিনিই।

Advertisement

দৃশ্য ২: সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জল খেতে চেয়ে বারবার সহ-পড়ুয়াদের দিকে ইঙ্গিত করছিল। কিন্তু তা বুঝতে পারছিল না কেউই। শেষে ক্লাস থেকে বেরিয়ে ছাত্রীটি সোজা ছুটে যায় প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ উপাধ্যায়ের ঘরে। তার ইশারা বুঝে জল খাইয়ে দেন বারাবনির পুঁচড়া ভগবান জৈন সড়াক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎবাবু।

আসানসোল ও বারাবনির ওই দুই স্কুলের দুই ছাত্রীর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। জেলার বহু স্কুলেই এ রকম বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বেশ কিছু পড়ুয়া রয়েছে। তাদের নিয়ে মাঝেমধ্যেই সমস্যায় পড়েন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কী ভাবে তাদের সমস্যা মেটাবেন, তা নিয়ে ভাবনায় পড়তে হয় তাঁদের। জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, সাধারণ ভাবে এই পড়ুয়াদের বাকি সব পড়ুয়ার মধ্যে রেখে পড়াশোনা করানো হয়। তবে তাদের সুবিধার জন্য স্কুল শিক্ষা দফতর বিশেষ কিছু পদক্ষেপ করেছে। যার মধ্যে রয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষক নিয়োগ।

Advertisement

জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়, একটি নির্দিষ্ট এলাকা ধরে একাধিক স্কুলের জন্য এক বা একাধিক প্রশিক্ষক নিয়োগ করা হয়। তাঁদের কাজ, যে সব স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়া রয়েছে সেখানে সপ্তাহে এক বা একাধিক দিন গিয়ে তাদের কাছে সমস্যা বুঝে সমাধানের ব্যবস্থা করা। স্কুলের শিক্ষকদেরও সেই সব সমস্যা ও সেগুলি সমাধানের উপায় জানানো তাঁদের কর্তব্য। কিন্তু বহু স্কুল কর্তৃপক্ষেরই অভিযোগ, বছরের পরে বছর ধরে বিশেষ প্রশিক্ষকের পা পড়েনি তাঁদের স্কুলে।

বারাবনির ওই স্কুলটির প্রধান শিক্ষক অভিজিৎবাবুর অভিযোগ, ‘‘বছর পাঁচেক আগে শেষ বার এক জন বিশেষ প্রশিক্ষক এসেছিলেন। জেলা শিক্ষা দফতরকে অনেক বার বলেছি। ফল হয়নি।’’ একই রকম অভিযোগ আসানসোল শিশুভারতী বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা অনিতাদেবীরও।

পশ্চিম বর্ধমানের জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক) অজয় পাল অবশ্য বলেন, ‘‘জেলায় একাধিক বিশেষ প্রশিক্ষক রয়েছেন। তাঁরা নিয়মিত স্কুলগুলিতে গিয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের সমস্যা বুঝে সমাধান করেন। শিক্ষকদেরও বোঝান।’’ এ বিষয়ে বিভিন্ন স্কুলের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’’

জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়ারা রয়েছে সেখানে আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা। যেমন, ওই সব পড়ুয়াদের সহায়তায় পরিবারের এক জন তার সঙ্গে সর্বক্ষণ স্কুলে থাকতে পারবেন। স্কুলে যাতায়াতের জন্য বিশেষ ভাতাও দেওয়া হয়। এ ছাড়া, স্কুলে র‌্যাম্পের ব্যবস্থা করতে হবে। হুইলচেয়ার রাখতে হবে। জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, সাধারণত স্কুলের প্রধান ও অভিভাবকদের এ সব জানা নেই। তাই পড়ুয়ারাও সে সব পায় না। সেগুলি স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের জানানোর কথা স্কুল পরিদর্শকদের। বাস্তবে তা হচ্ছে কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস অজয়বাবুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন