গলসি ১ ও কাঁকসা ব্লক

কোন ভাগে তাঁরা, সংশয় বাসিন্দাদের

হাতে আর এক সপ্তাহ। বর্ধমান জেলা ভাগ হলে দুর্গাপুর মহকুমার অন্তর্গত কাঁকসা এবং গলসি ১ ব্লক কোন দিকে পড়বে, তা নিয়ে দোটানা কাটছে না সেখানকার বাসিন্দাদের। প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, গলসি ১ পুরনো জেলায় এবং কাঁকসা নতুন জেলায় পড়বে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:০৭
Share:

হাতে আর এক সপ্তাহ। বর্ধমান জেলা ভাগ হলে দুর্গাপুর মহকুমার অন্তর্গত কাঁকসা এবং গলসি ১ ব্লক কোন দিকে পড়বে, তা নিয়ে দোটানা কাটছে না সেখানকার বাসিন্দাদের। প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, গলসি ১ পুরনো জেলায় এবং কাঁকসা নতুন জেলায় পড়বে। আবার প্রশাসনেরই অন্য এক সূত্র জানাচ্ছে, নিয়ম অনুযায়ী বিধানসভা কেন্দ্র ভাগ করা যায় না। সে ক্ষেত্রে দুর্গাপুর মহকুমার কোন এলাকা পুরনো বর্ধমানে থাকবে, কোন এলাকা নতুন জেলায় (যা পশ্চিম বর্ধমান হিসাবে পরিচিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল), সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়া পর্যন্ত তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।

Advertisement

২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমান জেলা ভাগে উদ্যোগী হন। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বর্ধমান জেলা পুলিশ থেকে আলাদা করে আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট গড়া হয়। আসানসোল পৃথক স্বাস্থ্যজেলা হিসেবেও ঘোষিত হয়। জেলা পরিষদের আসানসোল অফিস ঢেলে সাজা হয়। তৃণমূল, কংগ্রেসের মতো রাজনৈতিক দলগুলিও জেলার সংগঠনও দু’ভাগ করে নেয়। ২০১২ সালে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৎকালীন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা জেলা ভাগ নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে নতুন জেলার ভৌগলিক সীমানা মোটামুটি ভাবে ঠিক করে নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়।

কিন্তু, কাঁকসা ও গলসি কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে বিতর্ক কাটেনি। ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, গলসি বিধানসভা গ্রামীণ বর্ধমানে থাকবে। কাঁকসার বিদবিহার, বনকাটি, ত্রিলোকচন্দ্রপুর ও কাঁকসা গ্রাম পঞ্চায়েত পড়ছে গলসি বিধানসভায়। বাকি আমলাজোড়া, গোপালপুর ও মলানদিঘি পঞ্চায়েত পড়ছে দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রে। বৈঠকে কাঁকসা ব্লক ভাঙার প্রস্তাব উঠলে সিপিএম আপত্তি জানায়। যদিও তা গ্রাহ্য হয়নি। ফলে কাঁকসার শেষ তিনটি পঞ্চায়েত নতুন জেলার ভাগে পড়ার কথা বলেই প্রস্তাব যায় রাজ্যে।

Advertisement

এখন যখন জেলা ভাগ চূড়ান্ত, তখন কাঁকসার বিদবিহার পঞ্চায়েতের মানুষজন প্রস্তাবিত নতুন জেলা সদর আসানসোলের থেকে দূরত্বের কথা বিবেচনা করে পূর্ব বর্ধমানে থাকার পক্ষে নন। আবার গলসি ১ ব্লকের বাসিন্দারা একই কারণে আসানসোল নয়, বর্ধমানে থাকতে চান। অন্য দিকে, কাঁকসা পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ছে পানাগড়। এখানকার মানুষ একান্ত ভাবেই নতুন জেলায় থাকতে আগ্রহী। কারণ, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সম্প্রসারিত এলাকার মধ্যে পড়ে পানাগড়। বহু কল-কারখানা গড়ে উঠেছে এখানে। গলসি ১ ব্লকের ১১টি এবং গলসি ২ ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েত গলসি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ছে। পুরনো জেলায় থাকলে সেখানকার বাসিন্দাদের আপত্তি নেই। কারণ, বর্ধমান সদর কাছেই।

প্রশাসনের কিছু সূত্রে জানা যাচ্ছে, গলসি ১ পুরনো জেলায় এবং কাঁকসা ব্লক নতুন জেলায় পড়বে বলে ঠিক হয়েছে। তা করতে গেলে অবশ্য বিধানসভা কেন্দ্রের পুনর্বিন্যাস করতে হবে। এখানেও প্রশ্ন আছে। শুধু কাঁকসা নতুন জেলায় এলে সে ক্ষেত্রে কি আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের সীমানা কাঁকসা পর্যন্ত বেড়ে যাবে? এত দিন কাঁকসা ছিল বর্ধমান জেলা পুলিশের আওতায়। এ বার কি গোটা নতুন জেলাই কমিশনারেটের আওতায় আসবে? রাজ্যে এমন দৃষ্টান্ত আর নেই!

নতুন জেলা ঘোষণার এক সপ্তাহ আগে এ সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শিল্পাঞ্চল জুড়ে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক শুধু বলেন, ‘‘সব দিক বিবেচনা করেই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন