Contractual Worker death

এ বার ইস্কোয় ঠিকাকর্মীর মৃত্যু, ক্ষোভ

কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের পালিতে (শিফ্‌ট) সংস্থার বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস বিভাগের ২৬ মিটার উঁচু কনভার্টারের মেঝেতে কাজ করছিলেন সুজয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বার্নপুর শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:০৮
Share:

ইস্কো-য় শ্রমিকের মৃত্যুর পরে জটলা। নিজস্ব চিত্র

সেল-এর কারখানা ডিএসপি-র পরে এ বার বার্নপুর ইস্কো। ফের কর্তব্যরত অবস্থায় ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু। মঙ্গলবার রাতে ইস্কোয়, আসানসোলের মহিশীলার বটতলার বাসিন্দা সুজয় শীল (৪২) নামে ওই ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু হয়। সহকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের কারণে মৃত্যু হয়েছে সুজয়ের। যদিও, প্রাথমিক ভাবে কর্তৃপক্ষের দাবি, এখনই বলা যাচ্ছে না ঠিক কী কারণে ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের পালিতে (শিফ্‌ট) সংস্থার বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস বিভাগের ২৬ মিটার উঁচু কনভার্টারের মেঝেতে কাজ করছিলেন সুজয়। রাত প্রায় ১২টায় তিনি অসুস্থ বোধ করেন। সহকর্মীরা তাঁকে সেখান থেকে কারখানার ভিতরেই থাকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় সুজয়কে দ্রুত বার্নপুর ইস্কো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান। এ দিকে, তাঁর স্ত্রী ছবি শীল বলেন, “কাজে যাওয়ার পরেও আমার স্বামী ফোন করেন। তখনও সুস্থই ছিল। কোথা থেকে কী হয়ে গেল, বুঝতে পারছি না।”

এ দিকে, মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পরেই মৃতের সহকর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সহকর্মী অভিযোগ করেন, কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে রাতে হাসপাতালে পৌঁছন আইএনটিইউসি-র ইস্কো শাখার সম্পাদক হরজিৎ সিংহ। তিনি মৃতের নিকটাত্মীয়কে চাকরি দেওয়ার দাবি জানান। কর্তৃপক্ষের তরফে প্রয়োজনীয় আশ্বাস না পেলে দেহ ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না বলেও জানান শ্রমিক নেতৃত্ব। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে এমন টানাপড়েন, বিক্ষোভ। শেষমেশ কারখানার দুই আধিকারিক রণদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস প্রভাকরণ শ্রমিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তাঁরা লিখিত ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে।

Advertisement

এ দিকে, এই ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে আইএনটিইউসি, সিটু ও বিএমএস। হরজিতের অভিযোগ, “বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস এলাকাটি স্পর্শকাতর। কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস লিক হলে বোঝা যায় না। তাই নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হয়। এই কাজে কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব আছে।” সিটু-র ইস্কো কারখানা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক সৌরিন চট্টোপাধ্যায়েরও দাবি, তাঁদের অনুমান, কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস লিক করেই ওই শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তদন্ত চেয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বিএমএস। সংগঠনের ইস্কো ইউনিটের সম্পাদক দীপক সিংহের অভিযোগ, “কর্তৃপক্ষের তরফে শ্রমিক-নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়মিত উপেক্ষিত হচ্ছে। তাই গ্যাস লিক করে আরও এক জন শ্রমিকের মৃত্যু হল।”

যদিও কারখানার জনসংযোগ দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়। তবে এই ঘটনার আধিকারিক পর্যায়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের একটি সূত্রের এ-ও দাবি, ওই শ্রমিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। পাশাপাশি, দাবি, বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস বিভাগে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের মাত্রা মাপার জন্য স্বয়ংক্রিয় মিটার বসানো আছে। বিপজ্জনক কিছু অনুমান করলেই মিটারে থাকা অ্যালার্ম বেজে ওঠার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন