লাফিয়ে বাড়ছে লোকসান, আশঙ্কায় ডিপিএল কর্মীরা

এক দিকে লোকসানে রাশ টানা যাচ্ছে না। বছর-বছর বেড়েই চলেছে তার বহর। অন্য দিকে আবার শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে কার্যত উৎপাদনহীন হয়ে গিয়েছে সংস্থার কোকওভেন প্ল্যান্ট। এই পরিস্থিতিতে সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএল) কর্মীরা। কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশা করছেন, সংস্থা ঘুরে দাঁড়াবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০১:২৩
Share:

কোকওভেন প্ল্যান্ট।—নিজস্ব চিত্র।

এক দিকে লোকসানে রাশ টানা যাচ্ছে না। বছর-বছর বেড়েই চলেছে তার বহর। অন্য দিকে আবার শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে কার্যত উৎপাদনহীন হয়ে গিয়েছে সংস্থার কোকওভেন প্ল্যান্ট। এই পরিস্থিতিতে সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএল) কর্মীরা। কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশা করছেন, সংস্থা ঘুরে দাঁড়াবে।

Advertisement

ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য কোনও সংস্থা কয়লা সরবরাহে উৎসাহ না দেখানোয় দিল্লি গিয়ে সেলের কাছে দরবার করেন সংস্থার কর্তারা। কিন্তু ফল হয়নি। কয়লার অভাবে একমাত্র চালু পঞ্চম ব্যাটারিটিও বন্ধ হয়ে যায় শুক্রবার সন্ধ্যায়। সে খবর জানার পরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ওই বিভাগের হাজার দেড়েক কর্মী। কাজ হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয় তাঁদের মধ্যে। সংস্থার এক আধিকারিক অবশ্য জানান, অনুকূল পরিবেশ পেলে ফের উৎপাদন শুরু হবে এই বিভাগে। কর্মীদের কাজ হারানোর আশঙ্কা অমূলক।

ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন আর্থিক বর্ষে গড়ে প্রায় দু’শো কোটি হারে লোকসান হচ্ছে সংস্থার পাওয়ার প্ল্যান্ট বিভাগে। গত দু’বছরে লোকসানের কবলে পড়েছে সংস্থার কোকওভেন প্ল্যান্টও। একমাত্র ওয়াটার ওয়ার্কস বিভাগ ধারাবাহিক ভাবে লাভ করেছে। গত তিন বছরে ডিপিএলের মোট লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৬৩১ কোটি টাকা।

Advertisement

দুর্গাপুর শহর ও লাগোয়া এলাকার বিভিন্ন শিল্প সংস্থায় বিদ্যুতের জোগান নিশ্চিত করতে ১৯৬০ সালে রাজ্য সরকার ডিপিএল গড়ে তোলে। দু’টি ৩০ মেগাওয়াট, তিনটি ৭৭ মেগাওয়াট এবং একটি ১১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ইউনিট ছিল। ২০০৮ সালে তিনশো মেগাওয়াটের সপ্তম ইউনিটটি গড়ে তোলে একটি চিনা সংস্থা। নানা কারণে প্রথম ছ’টি ইউনিট বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বিভিন্ন কারণে সপ্তম ইউনিটটিও প্রায়শই বন্ধ রাখতে হত। এর ফলে ২০১৩ সালের শেষ দিকে ডিপিএলের উৎপাদন ক্ষমতা শূন্যে নেমে আসে। গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ কিনে পরিস্থিতি সামাল দিতে থাকে সংস্থাটি। গত বছর আড়াইশো মেগাওয়াটের অষ্টম ইউনিট গড়ে তোলা হয়। তবে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়নি। পরিস্থিতি বদলেছে মাত্র মাসখানেক আগে। সপ্তম ও অষ্টম ইউনিট একযোগে উৎপাদন শুরু করায় দৈনন্দিন বিদ্যুতের চাহিদা মেটার পরে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রিডে পাঠাতে পারছে সংস্থাটি। লোকসানে জেরবার সংস্থার হাল ফেরাতে তা যথেষ্ট কি না, সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শ্রমিক-কর্মীদের মধ্যেই।

ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ধারাবাহিক ভাবে লোকসান করছে সংস্থা। তা ছাড়া সপ্তম ও অষ্টম ইউনিটটি গড়ার সময়ে ঋণ নিয়েছিল সংস্থা। তা এখন সুদে-আসলে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন হাজার চারশো কোটি টাকায়। সংস্থার কোকওভেন প্ল্যান্ট বরাবর লাভজনক হিসেবে পরিচিত ছিল। এখানে সাধারণ কয়লা থেকে ল্যাম কোক, হার্ড কোক উৎপাদন করা হয়। কয়লা পাঠায় স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (সেল)। উৎপাদিত সামগ্রী কিনে নেয় দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট। আগে পাঁচটি ব্যাটারি চালু ছিল। এখন শুধু পঞ্চম ব্যাটারিটি চালু রয়েছে। ফলে, উৎপাদিত সামগ্রীর পরিমাণ ঠেকেছে তলানিতে। উৎপাদন প্রক্রিয়ার সময় যে কোল গ্যাস নির্গত হয় তা মিশ্র ইস্পাত কারখানা আগে কিনত। এখন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে, সেই বাবদ আয়ও বন্ধ।

এই পরিস্থিতিতে কোকওভেন প্ল্যান্ট কার্যত উৎপাদনহীন হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিক সংগঠনগুলি। সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘কর্তৃপক্ষের অপদার্থতায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’ আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাস বলেন, ‘‘দু’বছর আগেও লাভ করেছিল এই বিভাগ। তেমন একটি বিভাগের এ ভাবে কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না।’’

সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মৃণালকান্তি মৈত্রের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে সংস্থার এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী নয়, এত দিন কার্যত বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করছিল ডিপিএল। তবে এখন আর সেই অবস্থা নেই। সময়ের সঙ্গে ঘুরে দাঁড়াবে সংস্থা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন