যোগাযোগের সুবিধা, ভিড় বাড়ছে শহরে

গা থেকে গ্রাম-গ্রাম গন্ধটা যায়নি কুড়ি বছরেও। তবে উন্নত পরিষেবার আশায় ভিড় বেড়ে চলেছে শহরে। এলাকার নানা রাস্তা এখনও কাঁচা, নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফেরেনি পুরোপুরি, আলোর অভাব রয়েছে শহর জুড়ে। চিকিৎসা পরিষেবা নামমাত্র। দু’টি রেলগেট দিনের অনেকটা সময় বন্ধ থাকায় যানজট লেগেই থাকে। এত সব সমস্যা সত্ত্বেও একের পর এক নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

মেমারি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০০:১১
Share:

শহর জুড়ে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বাড়ি। ছবি: উদিত সিংহ।

গা থেকে গ্রাম-গ্রাম গন্ধটা যায়নি কুড়ি বছরেও। তবে উন্নত পরিষেবার আশায় ভিড় বেড়ে চলেছে শহরে।

Advertisement

এলাকার নানা রাস্তা এখনও কাঁচা, নিকাশি ব্যবস্থার হাল ফেরেনি পুরোপুরি, আলোর অভাব রয়েছে শহর জুড়ে। চিকিৎসা পরিষেবা নামমাত্র। দু’টি রেলগেট দিনের অনেকটা সময় বন্ধ থাকায় যানজট লেগেই থাকে। এত সব সমস্যা সত্ত্বেও একের পর এক নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে। জনসংখ্যাও বাড়ছে মেমারিতে।

মেমারির বাসিন্দা দেবপ্রসাদ সরকার ‘মেমারির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ বইয়ে লিখেছেন, ‘মোগল আমলের মহব্বতপুরই হল আজকের মেমারি।’ যজ্ঞেশ্বর চৌধুরীও ‘বর্ধমান ও সংস্কৃতি’ বইয়ের প্রথম খণ্ডে জানিয়েছেন, ১৮২০-২৫ পর্যন্ত মহব্বতপুর নাম ছিল, পরবর্তী সময়ে ওই নাম পরিবর্তন করে মেমারি হয়। দেবপ্রসাদবাবুর আরও দাবি, ১৮০২ সালে ব্রিটিশ শাসনকালে যে রাস্তা তৈরি হয়ে তার মধ্যে একটি হুগলি থেকে পাণ্ডুয়া-মহব্বতপুর। এর থেকেই বোঝা যায়, মেমারির আগের নাম ছিল মহব্বতপুর। সেই সময়ে বর্ধমান রাজার কাছ থেকে সরকার, জমিদারেরা যে সব দলিল পেয়েছিলেন তাতেও মহব্বতপুরের নাম লেখা রয়েছে।

Advertisement

১৯৯২ সালে মেমারিকে ‘নোটিফায়েড’ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৫ সালে মেমারি পঞ্চায়েতের সুলতানপুর, খাঁড়ো, ডিভিসি পাড়া, কৃষ্ণবাজার, হাটপুকুর, তালপাতা, জোয়ানপুর, ইলামপুর, কালিতলা, কাশিয়াড়া, বামুনপাড়া মোড়, পাশের বাগিলা পঞ্চায়েতের ইছাপুর এবং আমাদপুর পঞ্চায়েতের দক্ষিণ রাধাকন্তপুর এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠে মেমারি পুরসভা। ১৪.৬৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় এখন জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। প্রশাসন সূত্রের খবর, মেমারিতে তুলনামূলক বেশি হারে জনসংখ্যা বাড়ছে।

মেমারি পুর এলাকাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। শহরের ভিতর দিয়ে গিয়েছে হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইন। এই রেললাইন ধরে দু’পাশে শহর গড়ে উঠছে। এক ধারে জিটি রোডকে ঘিরে গড়ে উঠছে নতুন বসতি। আর অন্য দিকে বাসস্ট্যান্ড এলাকার আশপাশে গজিয়ে উঠছে নতুন জনপদ। স্থানীয় সূত্রের খবর, এই নতুন বাসিন্দাদের অধিকাংশই আসছেন পাশের ব্লক জামালপুর, মন্তেশ্বর ও রায়নার একাংশ থেকে। এ ছাড়া মেমারি ১ ও ২ ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম থেকেও অনেকে পুর এলাকায় এসে বাড়িঘর তৈরি করছেন। এমনকী, বর্ধমান শহরের উপর চাপ বাড়তে শুরু করায় শক্তিগড়-পালশিটের অনেকেও মেমারির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। বড়শুল এলাকার শিক্ষক রমানন্দ পাল বলছিলেন, “অবসরের পরে বর্ধমান শহরে জায়গা কিনে বাড়ি করব ভেবেছিলাম। কিন্তু বর্ধমান দিন-দিন পাল্টে যাচ্ছে। সে জন্যই মেমারির জিটি রোডের কাছে জায়গা কিনেছি। আমাদের মতো অনেকেই বর্ধমান ভাবনা ছেড়ে মেমারির দিকে এগোচ্ছে।”

মেমারির বাসিন্দা, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুকান্ত কোনার বলেন, “যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেই মেমারিতে বসবাসের প্রবণতা বাড়ছে।” জামালপুরের সৈকত রায়, সনৎ দাসেরা বলেন, “আমাদের এলাকা থেকে বর্ধমান কিংবা হাওড়া যাওয়া খুবই কঠিন। মেমারিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকার জন্যই এখানে বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছি।” মেমারি থেকে কাটোয়া, কালনা, আরামবাগ-সহ নানা রুটে প্রচুর বাস চলে। কয়েক বছর আগে নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়েছে মেমারিতে। সেটি আরও আধুনিক করে তুলছে বর্তমান পুরসভা।

তবে এলাকার অর্থনীতি এখনও অনেকাংশেই নির্ভরশীল হিমঘর ও চালকের উপরে। শহরের ভিতরেই রয়েছে ৯টি হিমঘর ও ৮টি চালকল। শহরেরর বাসিন্দা, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফুল্লকুমার পানের কথায়, “মেমারি রয়েছে মেমারিতেই। এই শহরকে আধুনিক হতে হলে এখনও অনেকটা পথ হাঁটতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন