West Bengal Budget 2024-25

বরাদ্দ কমালে ব্যাহত হবে কন্যাশ্রীর উদ্দেশ্য, দাবি

নাবালিকা বিয়ে বা স্কুলছুট আটকাতে রাজ্যের অন্যতম হাতিয়ার কন্যাশ্রী। এই প্রকল্প আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছে। ইউনেস্কোও স্বীকৃতি দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৯
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মেমারির সাতগেছিয়া এলাকার একটি স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্য নবম শ্রেণির মেয়েটি। তার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তবে স্কুল ও স্থানীয় প্রশাসন বিয়ে রুখে দেয়। অভিভাবকেরা জানান, মেয়েকে পড়ানোর মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই।

Advertisement

আউশগ্রামের অমরপুর এলাকার একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির পরীক্ষার পরেই এক ছাত্রীর দু’বার বিয়ে ঠিক হয়। এ ক্ষেত্রেও আর্থিক পরিস্থিতির জন্যই মেয়ের বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিভাবকেরা স্কুলকে জানান।

নাবালিকা বিয়ে ও স্কুলছুট কমাতে ২০১৬ সাল থেকে পূর্ব বর্ধমানের বেশির ভাগ স্কুলে তৈরি হয়েছে কন্যাশ্রী ক্লাব। সারা বছর ধরে ক্লাবের মেয়েরা নানা সামাজিক, গঠনমূলক কাজে জড়িয়ে থাকে। আবার কোন ছাত্রীর কী সমস্যা, বাড়িতে বিয়ের জন্য চাপ রয়েছে কি না, সেই খবরও পৌঁছে দেয় শিক্ষিকাদের কাছে। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে কন্যাশ্রী ক্লাব। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে ক্লাবের সদস্যদেরও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে বলে প্রশাসনের কাছে খবর রয়েছে। ‘খাতায়-কলমে’ না হলেও নাবালিকা বিয়ে, স্কুলছুটের ঘটনাও সামনে আসছে আকছার। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বাজেটে কন্যাশ্রী প্রকল্পে প্রায় ১৭৫ কোটি বরাদ্দ কমানো হয়েছে। শিক্ষাবিদদের দাবি, কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর টাকাটা বহু ঘরেই মেয়েদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জ্বালানি। সেখানে টাকা না বাড়িয়ে বরাদ্দ কমানো কিছুটা চিন্তার তো বটেই।

Advertisement

নাবালিকা বিয়ে বা স্কুলছুট আটকাতে রাজ্যের অন্যতম হাতিয়ার কন্যাশ্রী। এই প্রকল্প আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছে। ইউনেস্কোও স্বীকৃতি দিয়েছে। জেলার শিক্ষাবিদ রথীন মল্লিক বলেন, “পড়ার খরচ বাড়ছে। যাঁদের উদ্দেশে কন্যাশ্রী প্রকল্প, তাদের বছরে হাজার টাকায় পড়ার খরচ চলে না। কন্যাশ্রী প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানোর দরকার ছিল।”

চার বছর আগে কেন্দ্র ও ইউনিসেফের ‘জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা’য় দেখা যাচ্ছে, পূর্ব বর্ধমানে ২০ থেকে ২৪ বছরের বিবাহিত মেয়ের মধ্যে ৫০.৪ শতাংশের বিয়ে ১৮ বছর হওয়ার আগেই হয়েছে। সম্প্রতি জেলার একটি রিপোর্টেও দেখা যাচ্ছে, স্কুলছুটদের মধ্যে (মাধ্যমিকের নীচে) ৩৫.৪৮% নাবালিকা বিয়ের কারণে পড়া ছেড়ে দিয়েছে। শিক্ষাবিদ দেবেশ ঠাকুর বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী প্রকল্পেও নাবালিকা বিয়ে আটকাতে বেগ পেতে হয়েছে। সেখানে বরাদ্দ কমালে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যটাই ব্যহত হবে।’’

‘অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস’ সংগঠনের জেলার সভাপতি রূপক রায় বলেন, “করোনার পর থেকে কন্যাশ্রী ক্লাবগুলি পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে ওঠেনি।” মেমারির একটি স্কুলের টিআইসি টুম্পা সেন বলেন, “কন্যাশ্রী ক্লাবগুলি সতেজ থাকলে নাবালিকা বিয়ে, স্কুলছুট কমে।” বর্ধমানের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ভাস্বতী লাহিড়িও বলেন, “কন্যাশ্রী ক্লাবকে সক্রিয় করে রাখার জন্য আগের মতো প্রশাসনিক চাপ নেই।” একাধিক সংগঠনের দাবি, কন্যাশ্রী প্রকল্পকে সক্রিয় রাখার জন্য শিক্ষা দফতর বিভিন্ন কর্মসূচির টাকা দিত। জেলা প্রশাসনও নানা ভাবে কন্যাশ্রীদের উৎসাহ দিত। গত কয়েক বছর ধরে তাতে ভাটা পড়েছে। এক শিক্ষকের কথায়, “প্রকল্পের টানে স্কুলে নাম লেখাচ্ছে। কিন্তু পড়ুয়াদের ধরে রাখার জন্য নিয়মিত পড়ানো জরুরি। গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষক এতটাই অপ্রতুল যে সব ক্লাস নেওয়ার মতো শিক্ষক নেই। ফলে, একটা ফাঁক থেকেই যাচ্ছে।”

জেলার শিক্ষক মহলের একাংশের দাবি, ২০১৭ সালে বয়সের কারণে পঞ্চম শ্রেণিতে তুলনামূলক অর্ধেক পড়ুয়া ভর্তি হয়েছিল। তারা এ বছর একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠছে। কন্যাশ্রী ২ প্রকল্পে ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার যোগ্য তারা। গত বছরের চেয়ে ছাত্রীসংখ্যা অর্ধেক হওয়ায় বাজেটেও তার প্রতিফলনে বরাদ্দ কমেছে, দাবি তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন