ধসা নয়, ফলনও ভাল লাল-বেগুনি আলুতে

এ বার সেই নাবি ধসা থাবা বসাতে পারবে না ‘কুফরি অরুণ’ জাতীয় লাল ও বেগুনি রঙের আলুতে। এই আলু চাষেই কালনার বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের সলঘড়িয়া গ্রামের চাষিরা সফল হয়েছেন বলে দাবি মহকুমা কৃষি ও উদ্যান পালন দফতরের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৩২
Share:

পরিদর্শন: আলু খেতে কৃষিকর্তারা। শুক্রবার।— নিজস্ব চিত্র।

ফি বছর আলু চাষে নাবি ধসা রোগ ঠেকাতে ঘুম উড়ে যায় জেলার চাষিদের। খরচ হয় টাকাও। কিন্তু এ বার সেই নাবি ধসা থাবা বসাতে পারবে না ‘কুফরি অরুণ’ জাতীয় লাল ও বেগুনি রঙের আলুতে। এই আলু চাষেই কালনার বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের সলঘড়িয়া গ্রামের চাষিরা সফল হয়েছেন বলে দাবি মহকুমা কৃষি ও উদ্যান পালন দফতরের। শুক্রবার তিন জন চাষির জমিও পরিদর্শন করেন কৃষি আধিকারিকরা।

Advertisement

পূর্ব বর্ধমান জেলার বেশির ভাগ চাষি বহু দিন ধরে জ্যোতি আলুর চাষ করেন। বারবার দেখা যায়, নাবি ধসা-সহ নানা রোগের প্রকোপও। এই সমস্যা থেকেই মুক্তি দেবে এই দু’ধরনের আলু, দাবি কৃষি দফতরের। দফতর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে তৈরি হয় কুফরি অরুণ জাতীয় আলু বীজ। চাষের জন্য এই প্রজাতির অনুমোদন মেলে ২০০৩ সালে। রঙিন এই আলুতে ধসা রোগ হয় না বলেই দাবি। তা ছাড়া এই আলু তৈরি হয়ে যায় ৭৫-৯০ দিনের মধ্যে।

গত বছর সিমলার ‘আলু গবেষণা কেন্দ্র’-এর বিজ্ঞানীদের থেকে সলঘরিয়া গ্রামের সুজিত দাস এই প্রজাতির কয়েক বস্তা বীজ পান। সেখান থেকে যা ফলন মেলে, তা বীজ হিসাবে তিনি হিমঘরে রেখে দেন। এ বার সুজিতবাবুর সঙ্গে ওই গ্রামেরই সুকান্ত দাস ও রাজু শেঠ নামে আরও দু’জন চাষিকে কুফরি অরুণ আলু চাষে উৎসাহিত করা হয়। তাঁরা মোট ১০ বিঘা জমিতে এই প্রজাতির আলু চাষ করেন। সম্প্রতি এই চাষের খবর পৌঁছয় মহকুমা কৃষি দফতর ও উদ্যান পালন দফতরে। এ দিন দুপুরে ওই দুই দফতরের তিন আধিকারিক পার্থ ঘোষ, সুব্রত ঘোষ ও পলাশ সাঁতরা সলঘরিয়া গ্রামে পৌঁছে পরীক্ষা করে দেখেন এলাকার আবহাওয়ায় কেমন ফলন মিলেছে। জমিতে নেমে তারা মাটি খুঁড়তেই দেখতে পান প্রায় ৫০ গ্রাম ওজনের লাল ও বেগুনি রঙের আলু। নেই রোগ-পোকার হামলা। কৃষি দফতরের তিন আধিকারিক চাষিদের জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, চাষের বয়স ৬০ দিন। অর্থাৎ জমিতে আলুর বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে আরও। সুজিতবাবু বলেন, ‘‘অত্যন্ত সুস্বাদু এই আলু। রঙিন বলে ক্রেতাদের কাছে বাড়তি কদরও রয়েছে।’’

Advertisement

এই আলু চাষে বেশ কিছু সুবিধাও রয়েছে। চাষিরা জানান, এই আলুর ক্ষেত্রে সাধারণ আলুর তুলনায় বস্তা পিছু প্রায় একশো টাকা বেশি দর মেলে। জ্যোতি আলুর থেকে এই আলুর ফলন বেশি। চাষে রাসায়নিকও লাগে অনেক কম। ফলে খরচও কমে যায়। সুজিতবাবু বলেন, ‘‘সাধারণ আলু চাষে ডিএপি সার যেখানে বিঘা প্রতি জমিতে লাগে দেড়শো কেজি, সেখানে এই চাষে দরকার মোটে ৭৫ কেজি। ঝামেলা নেই কীটনাশক দেওয়ারও।’’ সুকান্ত বাবু জানান, বর্তমানে একটাই সমস্যা রয়েছে। আলু যত বাড়ছে তত ইঁদুরের হামলা হচ্ছে জমিতে।

পরিদর্শনের পরে কৃষি ও উদ্যানপালন দফতরের তিন কর্তারই দাবি, এই ধরনের আলুর খুবই ভাল ফলন মিলেছে। ভাল বাজার মিললে আগামী দিনে এই চাষের এলাকাও বাড়তে পারে বলে জানান কৃষি-কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন