ঘিঞ্জি গলিতে পথই পায় না দমকল

আসানসোল পুরসভা সূত্রে জানা যায়, অগ্নি নির্বাপণের অবস্থা কেমন, তা নিয়ে সম্প্রতি দমকলের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৮
Share:

পথ নেই: আচমকা আগুন ধরলে বাজারে কোন পথে ঢুকবে দমকল, প্রশ্ন আসানসোলে। ছবি: পাপন চৌধুরী

অবস্থা এক: মাথার উপরে তারের জাল। ঘিঞ্জি গলি। প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে চলছে বিকিকিনি। আচমকা আগুন ধরলে দমকলের পক্ষে আগুন নিয়ন্ত্রণ তো দূরঅস্ত, দমকলের ইঞ্জিন আদৌ ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়েই সংশয় রয়েছে। এমনই হাল আসানসোলের মূল বাজারের।

Advertisement

অবস্থা দুই: আসানসোল শহর দমকলের কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল আড়াইশো কিলোমিটার ব্যাসের এলাকা। ফলে কুলটি বা বার্নপুরের ভিতরে কোথাও আগুন ধরলে আদৌ সময়মতো দমকল পৌঁছতে পারবে কি না, তা নিয়েই সন্দিহান আসানসোল শিল্পাঞ্চলের নানা এলাকার বাসিন্দারা।— এই শিল্পাঞ্চলের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা বা দমকলের পরিকাঠামোর রুগ্‌ন ‘অবস্থা’-র এই দু’টি উদাহরণ শুধু নয়। ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ নাগরিক, সকলেরই অভিযোগ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক বদলে গিয়েছে শহর ও লাগোয়া এলাকা। কিন্তু অভিযোগ, সেই তুলনায় নজর দেওয়া হয়নি পরিকাঠামো উন্নয়নে। কলকাতার সাম্প্রতিক আগুন তাই উস্কে দিচ্ছে এমনই নানা পরিস্থিতির কথা।

গত দু’দশকে আসানসোল শহর ও লাগোয়া এলাকায় তৈরি হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি নানা সংস্থার বহুতল। সেই সঙ্গে ঘিঞ্জি হয়েছে শহর। শহর বেড়েছে কল্যাণপুর, ফতেপুর লাগোয়া এলাকা পর্যন্ত। আগুন নিয়ে আশঙ্কার কারণও রয়েছে বলে মনে করছেন শহরবাসী। কারণ, তাঁদের অভিজ্ঞতা, অতীতে যত বারই ঘিঞ্জি এলাকায় আগুন ধরেছে দমকলের ই়ঞ্জিন সময়মতো পৌঁছতে পারেনি। উঁচু সিঁড়ি না থাকায় বহুতলে আগুন নেভাতে নাভিশ্বাস উঠেছে দমকলকর্মীদের। গত এক দশকে আসানসোলের বস্তিন বাজার, আনাজ মার্কেট-সহ বেশ কিছু জায়গায় আগুন ধরে বড়সড় বিপত্তি ঘটে।

Advertisement

দমকলকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, একটি মাত্র দমকলকেন্দ্রের উপরে নির্ভর করে এত বিস্তীর্ণ এলাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করা কার্যত অসম্ভব। সম্প্রতি কুলটি ও বরাকর বাজারে আগুন ধরে। সেখানেও সময়ে দমকলের ইঞ্জিন পৌঁছতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠেছিল। এ ছাড়া আসানসোলের দমকলকেন্দ্রেও আগুন নেভানোর জন্য রয়েছে মাত্র চারটি ইঞ্জিন। অতীতে ইস্কোর কুলটি কারখানা চালু থাকার সময়ে কারখানা থেকে দু’টি ইঞ্জিন পাওয়া যেত। কিন্তু কারখানা বন্ধের পরে তা আর হয় না। শহরের চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তের আক্ষেপ, ‘‘জেলা ভাগের পরেও দমকলের পরিকাঠামো উন্নত হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা দরকার।’’

আসানসোলের দমকল আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, সব থেকে খারাপ অবস্থা দমকলকেন্দ্র থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বের আসানসোল মূল বাজারের। পলিথিনের ছাউনির তলায় অস্থায়ী দোকান, দাহ্য জিনিসপত্রের গুদাম, সঙ্কীর্ণ গলি বিপদ বাড়িয়েছে। অথচ, বাজারে কার্যত কোনও অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ী নৃপেন দত্তের কথায়, ‘‘এখানে এক বার আগুন ধরলে আমরাও বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মতো সর্বস্ব হারাব। বাজারের ব্যবসায়ীদেরও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।’’ একই রকম জতুগৃহের অবস্থা নিয়ামতপুপর, বরাকর বাজারেরও।

তবে আসানসোল পুরসভা সূত্রে জানা যায়, অগ্নি নির্বাপণের অবস্থা কেমন, তা নিয়ে সম্প্রতি দমকলের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনি জানান, দমকল ও পুরসভার যৌথ দল গড়ে শহরের বিপজ্জনক এলাকাগুলি পরিদর্শন করা হবে। মার্কেট কমপ্লেক্স ও বহুতলগুলিতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না, দেখা হবে তা-ও। বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির কাছে দমকলের উপযুক্ত ছাড়পত্র আছে কি না বা নিয়মাবলি ঠিক মতো মেনে চলা হচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখা হবে তা-ও। জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘অনেক কিছুই করা হবে। শহরের বহুতলগুলির জন্য সরকারের কাছে আমরা একটি উঁচু হাইড্রলিক সিঁড়িও চেয়েছি।’’ শহরকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করতে দমকলের শীর্ষকর্তারাও চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানান দমকলের আসানসোল শাখার আধিকারিক দেবায়ন পোদ্দার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন