শেষযাত্রায়: অসীম ঘটককে শ্রদ্ধা আসানসোল আদালত চত্বরে। ছবি: শৈলেন সরকার
গত ছ’মাসে একই এলাকায় বারবার ঘটেছে দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার তর্পণ শেষে হিরাপুরের ভূতনাথ মন্দির ঘাটের সেই এলাকা, দক্ষিণ-পূর্ব রেল সেতুর নীচে দামোদরে তলিয়ে যান মন্ত্রী মলয় ঘটকের বড় দাদা অসীমবাবুও। তার পরে বুধবার দুর্ঘটনাস্থলে ‘বিপজ্জনক’ বোর্ড বসানোর কথা জানান মন্ত্রী। ওই এলাকায় পুণ্যার্থীদের যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারির কথাও জানিয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন। এলাকাবাসীর যদিও প্রশ্ন, বিপজ্জনক জেনেও আগেভাগে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ দিন এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, এর আগে একাধিকবার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু টনক নড়েনি প্রশাসন। এমনকী অসীমবাবু তলিয়ে যাওয়ার পরে বুধবারও অনেকে তর্পণ করতে যান ওই একই এলাকায়। যদিও তাঁদের দুর্ঘটনাস্থলের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেননি পুলিশ ও সিভিক ভালান্টিয়ারেরা।
এ দিন দাদাকে শ্রদ্ধা জানাতে জানাতেই মন্ত্রী মলয়বাবু বলেন, ‘‘শুনেছি, ঘাটের ওই এলাকাটি অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ। উচিত ছিল, সেখানে অন্তত একটি বিপজ্জনক বোর্ড থাকার। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’’ সাধারণ মানুষ যাতে ওখানে না যান, সে বিষয়ে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা। এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘ওই এলাকায় ব্যারিকেড করা হবে।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রলয় রায়চৌধুরীও দুর্ঘটনাস্থলে সতর্কীকরণ বোর্ড বসানোর
কথা জানান।
তলিয়ে যাওয়ার ১৬ ঘণ্টা পরে বুধবার ভোর ছ’টা নাগাদ অসীমবাবুর দেহ ভেসে ওঠে দুর্ঘটনাস্থলেই। প্রশাসনের নানা পদক্ষেপের কথা শুনে পাড়ে উপস্থিত কয়েক জন বাসিন্দার আক্ষেপ, ‘‘আগেভাগে যদি এ সব ব্যবস্থা নিত প্রশাসন, তা হলে ছ’মাসে দশ জনের মৃত্যু দেখতে হতো না।’’ ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রশাসনের একাধিক কর্তার তবে দাবি, দুর্ঘটনা এড়াতে বাসিন্দাদেরও সচেতন
হওয়া দরকার।
আসানসোল জেলা হাসপাতালে অসীমবাবুর দেহের ময়না-তদন্তের পরে অসীমবাবুকে নিয়ে যাওয়া হয় আসানসোলের চেলিডাঙার পৈতৃক বাড়িতে। সেখানেই প্রয়াত আইনজীবী অসীমবাবুকে শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রী, আত্মীয় ও অন্যান্য শুভানুধ্যায়ীরা। পরে অসীমবাবুর দেহ নিয়ে আসা হয় আসানসোল বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাঘরে। সেখানে আইনজীবীরা শ্রদ্ধা জানান অসীমবাবুকে। আইনজীবীরা জানান, প্রায় চার দশক ধরে আসানসোল আদালতে ওকালতি করেছেন অসীমবাবু। তিনি বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতিও ছিলেন। নীরবতা পালনের পরে এ দিন আইনজীবীরা আদালতের কোনও কাজ করেননি। দুপুরে কালাঝড়িয়া শ্মশানে অসীমবাবুর শেষকৃত্য
সম্পন্ন হয়েছে।