ধুঁকতে থাকা এএসপি-তেও গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগ

সমবায়ে বোর্ডের মেয়াদ পাঁচ বছর। ২০১২-র ২২ জুন বোর্ড তৈরি হয়। ২০১৬-র জুনে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও পর্যাপ্ত পুলিশ নেই, এই কারণ দেখিয়ে অনির্দিষ্ট কাল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৪২
Share:

কারখানার ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়েই সংশয়ে শ্রমিকরা। এই অবস্থায় দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের (এএসপি) সমবায় নির্বাচনে আইএনটিটিইউসি-র দু’টি গোষ্ঠী পৃথক মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, কারখানা বাঁচাতে যে সময় সকলে এককাট্টা হওয়ার কথা, সেই সময়ে তা না হয়ে সামনে আসছে কোন্দল।

Advertisement

কর্মীরা জানান, সমবায়ে বোর্ডের মেয়াদ পাঁচ বছর। ২০১২-র ২২ জুন বোর্ড তৈরি হয়। ২০১৬-র জুনে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও পর্যাপ্ত পুলিশ নেই, এই কারণ দেখিয়ে অনির্দিষ্ট কাল নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়। সমবায় আইন অনুযায়ী, এক হাজারের উপরে সদস্য থাকলে প্রথমে তাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। সেই প্রতিনিধিরা ‘বোর্ড অফ ডিরেক্টরস’ নির্বাচন করেন। ২০১২-য় বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে সমবায়ের সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ২৩০০। মোট ৫৮ জন প্রতিনিধির মধ্যে আইএনটিইউসি-র ২৯ জন ও সিটুর ২৮ জন নির্বাচিত হন। একটি আসনে জেতেন আইএনটিটিইউসি-র এক প্রতিনিধি, যিনি বোর্ড গঠনে আইএনটিইউসি-কে সমর্থন করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিত্বের সুবাদে ন’জনের বোর্ড তৈরি করে আইএনটিইউসি।

কিন্তু বর্তমানে সমবায়ের সদস্য সংখ্যা, প্রায় সাড়ে আটশো। সমবায় আইন অনুযায়ী, হাজারের নীচে সদস্য হওয়ায় এ বার বোর্ডের ন’জন ডিরেক্টর নির্বাচনে সরাসরি ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন সদস্যেরা। এএসপি-র কৌশলগত বিলগ্নিকরণের কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বরাবর একযোগে আন্দোলন করছে সিটু এবং আইএনটিইউসি। আলাদাভাবে আন্দোলন করছে আইএনটিটিইউসি। আন্দোলনের সময় কোনও দ্বন্দ্ব নজরে আসেনি। তবে নির্বাচন ঘোষণা হতেই ফের দু’টি গোষ্ঠীর উপস্থিতি প্রকট হতে শুরু করেছে বলে দাবি কর্মীদের। শেষমেশ আইএনটিটিইউসি-ক দু’টি গোষ্ঠীই পৃথক মনোনয়নও দিয়েছে।

Advertisement

শ্রমিকদের একাংশের মতে, এই কারখানায় আইএনটিটিইউসি-র দু’টি গোষ্ঠী রয়েছে। সংগঠন সূত্রেই খবর, একটি গোষ্ঠী আইএনটিটিইউসি-র এএসপি শাখার সম্পাদক অশোক কুণ্ডুর অনুগামী। অন্যটি আইএনটিটিইউসি-র প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ। তাঁদের তরফেও ১৪টি মনোনয়ন তোলা হয়েছে বলে কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে।

যদিও প্রকাশ্যে দুই নেতাই কোন্দলের কথা স্বীকার করেননি। প্রভাতবাবুর দাবি, ‘‘আমার কোনও প্রার্থী নেই ওই নির্বাচনে। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’’ অশোকবাবুও বলেন, ‘‘আমাদের তরফে ১৪টি মনোনয়ন দাখিল করা হয়েছে। অন্য আরও কেউ কেউ করেছেন বলে শুনেছি। আমাদের দু’একজন তাঁদের সঙ্গে আছে। তবে বছরভর আন্দোলন বা অন্যান্য কর্মসূচিতে তাঁদের দেখা মেলে না।’’ আজ, শুক্রবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে বাকি পাঁচটি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারও করা হবে বলে দাবি অশোকবাবুর।

এই দুই গোষ্ঠীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন আইএনটিটিইউসি-র সমর্থক কর্মীদেরই একাংশ। তাঁদের ক্ষোভ, এমনতিই কর্মী সংখ্যা কমে বর্তমানে ৮৫৪ জন। তার উপরে জানুয়ারিতে আরও প্রায় ১৫ জন কমে যাবেন। নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়াও বন্ধ দীর্ঘদিন। কেন্দ্রীয় সরকার কারখানার কৌশলগত বিলগ্নিকরণের কথাও ঘোষণা করেছে। কারখানা হয়তো বন্ধও হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে এমন কোন্দল আদতে শ্রমিক-স্বার্থের পক্ষেই ক্ষতিকর, মনে করছেন সংগঠনের সদস্যদের একাংশই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন