শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টোটো। ছবি: ওমপ্রকাশ সিং।
খনি শহর রানিগঞ্জে রাস্তাঘাট সংকীর্ণ। তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে টোটোর দৌরাত্ম্য। শহরের প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম নেতাজি সুভাষ বসু রোড (বর্তমানে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের অন্তর্গত)-সহ প্রতিটি রাস্তাতেই অবাধে টোটো চলাচল করছে। ফলে যানজটের জেরে ৫ মিনিটের পথ পৌঁছতে আধঘণ্টা লেগে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সমস্যা সমাধানের জন্য বার বার প্রশাসনের তরফে প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজ হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিত্যযাত্রীরা।
শহরবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন বলছে, ‘সমস্যা সমাধানের জন্য বৈঠক করা হচ্ছে। অথচ তা কার্যকর হচ্ছে না।’ টোটো চালকেরা উল্টে বাস চালকদের মারধর পর্যন্ত করছে। অভিযোগ দায়ের হলেও কেউ গ্রেফতার হচ্ছে না। বেশ কয়েক দফায় বাস চলাচল বন্ধ করে বাস পরিবহণ কর্মীরা বিক্ষোভ দেখালে দিন-কয়েক পুলিশি নজরদারি চালানো হয়েছে। তাতে কোনও প্রতিকার মেলেনি।
রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্ত জানান, সকাল ১০টা নাগাদ বিধায়ক হিসেবে কোথাও যেতে গেলেও তাঁকে রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হেঁটে যেতে হয়। মাত্রাতিরিক্ত টোটো চলাচলের ফলে যানজটের কারণে গাড়ির থেকে হেঁটে আগে পৌঁছনো যায়। তিনি বলেন, “শহরের প্রধান রাস্তা জাতীয় সড়কভুক্ত হওয়ায় যান চলাচল অনেক বেড়ে গেলেও সেই পুরনো আমলের পথ সম্প্রসারিত হয়নি। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘টোটো গ্রাম ও প্রান্তিক শহরে চলবে। আদতে সরকারের দেখভালের লোকের অভাবে তা হয়নি।’ ব্যস্ত শহরেও টোটোর দাপট বেড়েছে। তাই বলে আমরা টোটোর বিরুদ্ধে নই। কিন্তু তা সঠিক জায়গাতেই চালাতে হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১০১৭ সালের ১৯ জুলাই পুলিশ-প্রশাসন রানিগঞ্জ শহরে মাইকের মাধ্যমে প্রচার করেছিল, শহরের নেতাজি সুভাষ বসু রোডে টোটো চলবে না। তারপর ২৪ জুলাই কয়েকটি টোটোকে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২১ ডিসেম্বর টোটো চালকের সঙ্গে বাস চালকের বচসা থেকে মারামারির ঘটনাও ঘটেচে। তাতে চার জন বাসকর্মী আহত হন। বাস চালানো বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানায় বাস পরিবহণ কর্মীরা। এরপরে পশ্চিম বর্ধমান জেলাশাসকের সঙ্গে বাস মালিক সংগঠন, পরিবহণকর্মী ইউনিয়ন ও পুলিশ প্রতিনিধিদের বৈঠকে ঠিক হয়— তারবাংলা মোড় থেকে রানিগঞ্জ মোড় পর্যন্ত কোনও টোটো চলবে না। ২২ ডিসেম্বর এই অংশে টোটো চলাচল পুলিশ আটকে দেয়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এর প্রতিবাদে পরের দিন অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর বেলা ১১টা নাগাদ তারবাংলা মোড়ে রাস্তার ধারে বেশ কয়েকজন টোটো চালক গাড়ি দাঁড় করিয়ে নেতাজি সুভাষ বসু রোডে টোটো চালাতে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, খোলাবাজার থেকেই তাঁরা টোটো কিনেছেন। স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের কাছে টোটো রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টোটো চলাচলে যাত্রীদের যখন কোনও আপত্তি নেই, তখন শহরের প্রধান রাস্তায় তাঁরা চালাবেন।
তৃণমূল প্রভাবিত আসানসোল সাবডিভিশনাল ই-রিকশা ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আর ভি কে সিংহভাট্টি জানান, রানিগঞ্জে রাজ্য সরকার ‘টেম্পোরারি ইনডেক্স নম্বর’ ৫৭০টি টোটোকে দিয়েছিল। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে ২ হাজার টোটো চলছে। সরকার বেআইনি টোটো বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিলেও কোনও কাজ হয়নি। এতে যানজট তৈরি হচ্ছে। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, “আমাদের বলার কিছু নেই। এর জেরে একে একে বাসের সংখ্যা কমছে। কারণ, টোটোর দৌরাত্ম্যে বাসে যাত্রী কমে যাচ্ছে। প্রশাসন বছরে তিন বার বৈঠক করে ট্র্যাফিক আইন মেনে জাতীয় সড়ক-সহ অন্য রাস্তায় টোটো চালাতে না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও তা প্রহসনে পরিণত হচ্ছে।’’
রানিগঞ্জে টোটোর দাপট যে রয়েছে সে কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। রানিগঞ্জের অবস্থা সব থেকে খারাপ। ওটা আমরা ঠিক করবই।’’