অর্ডার দিলে শব্দবাজি  দোরগোড়ায়

ভরদুপুরে মোটরবাইকে এসে দোকানের সামনে থেকে জিজ্ঞেস করলেন যুবক, ‘‘চকোলেট হবে?’’ আশপাশ দেখে ঘাড় নাড়লেন দোকানদার। ইশারায় যেতে বললেন পাশের ঘরের দিকে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত  ও কেদারনাথ ভট্টাচার্য

বর্ধমান ও কালনা শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৫৪
Share:

নিষেধ: নানা দোকানে রাখা হচ্ছে বিজ্ঞপ্তি। নিজস্ব চিত্র

বাজারে ঢোকার মুখেই সাদা কাগজের পোস্টার, ‘এখানে নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হয় না’। পরপর কয়েকটি দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে উত্তর এল, ‘পুলিশের ঝামেলা, তাই রাখি না’। কিন্তু তার পরেই এক জনের উল্টো জবাব— ‘‘হ্যাঁ, পাওয়া যাবে। তবে দোকানে হবে না। অ্যাডভান্সে অর্ধেক দাম দিয়ে যান। নাম-ঠিকানা লিখে দিন। রাতে মাল পৌঁছে যাবে।’’

Advertisement

ভরদুপুরে মোটরবাইকে এসে দোকানের সামনে থেকে জিজ্ঞেস করলেন যুবক, ‘‘চকোলেট হবে?’’ আশপাশ দেখে ঘাড় নাড়লেন দোকানদার। ইশারায় যেতে বললেন পাশের ঘরের দিকে। মিনিট পনেরো পরে প্যাকেট হাতে বেরিয়ে মোটরবাইকে চড়ে দ্রুত এলাকা ছাড়লেন যুবক।

বর্ধমানের তেঁতুলতলা বাজার থেকে কালনার চকবাজার, কালীপুজোর আগের দিন ধরা পড়ল এমন সব দৃশ্যই। দীপাবলির বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই বাজি নিয়ে বসে পড়েছেন বিক্রেতারা। কারও পসরা তন্নতন্ন করে খুঁজেও মিলছে না শব্দবাজি। সকলেই সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, পুলিশ এসে তল্লাশি করছে। তাই ও সব রাখা হচ্ছে না। কিন্তু ক্রেতারা একটু খোঁজাখুঁজি করলেই মিলে যাচ্ছে চকোলেট বোমা থেকে কালী পটকা।

Advertisement

গত কয়েক দিনে পুলিশ নিষিদ্ধ বাজি বিক্রির জন্য ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। প্রায় এক লক্ষ নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধারও হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধারের জন্য জেলা জুড়ে বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যাগও তল্লাশি করা হয়েছে।’’

এত তল্লাশির পরেও যে শব্দবাজি বিকোচ্ছে, বাজার ঘুরেই মালুম হয়। ক্রেতা সেজে আতসবাজি দেখার ফাঁকে চকোলেট বোমা কোথায় পাওয়া যাবে জানতে চাইতেই বিক্রেতা নিচুগলায় বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে আসুন। তবে বেশি করে কিনতে হবে।’’ ক্রেতার ব্যাগ তল্লাশিতে ধরা পড়ে যাওয়ার ঝঞ্ঝাট এড়াতে ‘হোম ডেলিভারি’র ব্যবস্থা হয়েছে রানিগঞ্জ বাজার-তেঁতুল বাজারের কাছে একটি দোকানে। তবে শর্ত, অন্তত হাজার দুয়েক টাকার বাজি কিনতে হবে। একই রকম শর্তে জিটি রোডের ধারে দু’এক জন দোকানদারও ‘হোম ডেলিভারির’ আশ্বাস দেন।

বাজি বিক্রেতা শেখ আব্দুল কাদের, রাজ হকদের দাবি, ‘‘জিএসটি-র কোপে বাজির দাম এক লপ্তে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। এমনিতে লোকজন বাজারে আসছে না। এখন শব্দবাজি বিক্রি মানে বিপদে পড়া। আমরা ও সব বিক্রি করছি না। যাঁরা করছেন, তাঁরা বুঝবেন।’’ এক বাজি বিক্রেতা অবশ্য বলেন, ‘‘কিনে ফেলেছি, বিক্রি তো করতে হবে। তাই ক্রেতাদের সুবিধার্থে হোম ডেলিভারি!’’

কালনার এক বিক্রেতার কথায়, ‘‘অনেকে দোকানে এসেই শব্দবাজির খোঁজ করেন। লুকিয়ে-চুরিয়ে যেটুকু করা যায়, করছি।’’ আর এক জনের আবার দাবি, গ্রামগঞ্জে প্রশাসনের এত কড়াকড়ি নেই। সেখানে বিক্রি সহজ হচ্ছে। অনেক পুজো উদ্যোক্তা বিসর্জনের রাতে সুতো দিয়ে তৈরি জোরালো আওয়াজের বেলবোম বাজি পোড়ান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালনার সুলতানপুর, বাঘনাপাড়া, আনুখালে কয়েকজন বাজি প্রস্তুতকারকের কাছে সেগুলি মেলে। এক পুজো উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘প্রশাসনের ভয়ে এখন অনেক কম শব্দবাজি তৈরি হয়। শুধু বিশ্বস্ত লোকজনকে গোপনে বিক্রি করেন ওই বিক্রেতারা।’’ কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানান, বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযান চালানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন