রুট তৈরির পরেও দাপট অবৈধ অটোর

অটোর দাপট বন্ধ করতে নতুন রুট তৈরি করেছে প্রশাসন। রুটে চলার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম হয়েছে। কিন্তু, অটোর দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়নি আসানসোলে। শহর জুড়ে বেআইনি অটো চলছেই বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১৪
Share:

ইচ্ছে মতো ছুটছে অটো, ফের উঠছে অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।

অটোর দাপট বন্ধ করতে নতুন রুট তৈরি করেছে প্রশাসন। রুটে চলার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম হয়েছে। কিন্তু, অটোর দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়নি আসানসোলে। শহর জুড়ে বেআইনি অটো চলছেই বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তা বন্ধ না হলে বাস বন্ধের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মিনিবাস মালিকেরা। প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য জানান, বেআইনি ভাবে চলা অটো রুখতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শনিবার মাঝ রাতে শহরের পেট্রোল পাম্পে কর্মীদের মারধরে অভিযুক্ত দুই অটো চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

মাস দেড়েক আগে আসানসোলে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকে পরিবহণ দফতর ঠিক করেছিল, শহরের বাস রুটগুলিতে কোনও অটো চলবে না। এর জন্য ৮৭টি অটোর রুট তৈরি করা হয়। সেখানে চলার জন্য ১৩৮৭টি অটোকে পারমিট দেওয়া হয়। লঙ্ঘিত হয়েছে সেই নিয়ম। প্রত্যেক বাসরুটে প্রতিদিন দিব্যি কয়েক হাজার অটো চলছে বলে বাসের কর্মীদের অভিযোগ।

নিয়ম ভেঙে অটো চলাচল বন্ধে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট দফতরের উদাসীনতাই দায়ী বলে দাবি করেন বাস মালিক ও শহরবাসীর অনেকের। তাঁদের অভিযোগ, ঝাড়খণ্ড ও পুরুলিয়া থেকে পারমিট নেওয়া কয়েক হাজার অটো প্রতিদিন এলাকায় চলছে। তাদের পাকড়াও করার কোনও ব্যবস্থা নেই। এমনকী, চার জনের বেশি যাত্রী বহন না করার সরকারি নিষেধাজ্ঞাও এই অটো চালকেরা মানছেন না বলে অভিযোগ। গড়ে ৭ থেকে ১০ জন যাত্রী নিয়ে ছুটছে অটোগুলি। কোনও যাত্রী এই অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই তাঁকে অপমান করা হচ্ছে।

Advertisement

বেআইনি অটোর দাপট এখানেই শেষ নয়। প্রায় দিনই যাত্রীদের সঙ্গে অটো চালকদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে— কখনও বেশি যাত্রী তোলার প্রতিবাদ করায়, কখনও যাত্রীদের ঠিক জায়গায় না নামানোর প্রতিবাদ করায়, আবার কখনও বেশি ভাড়া চাওয়ার প্রতিবাদ করায়। ইদানীং আবার অভিযোগ উঠছে, পুজোর বোনাসের নামে জোর করে নির্দিষ্ট ভাড়ার থেকে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মহিলা যাত্রীদের সঙ্গে অটো চালকদের অভব্যতার অভিযোগও মিলেছে। কিন্তু চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, তারা ঝাড়খণ্ড বা পুরুলিয়ার পারমিট নিয়ে অটো চালাচ্ছে। তাই তাদের নম্বর ধরে খোঁজ করেও পাকড়াও করা যাচ্ছে না।

অটো-দৌরাত্ম্যের শেষ ঘটনাটি ঘটে শনিবার রাতে। আসানসোলের একটি পেট্রোল পাম্পে দু’টি অটোতে চড়ে তেল নিতে এসে চালক-সহ কয়েক জন দুই পাম্প কর্মীকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। রবিবার রাতে প্রহৃতরা অভিযোগ করার পরে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানান এসিপি (সেন্ট্রাল) বরুণ বৈদ্য।

বেআইনি অটো চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন তৃণমূলের পরিবহণ কর্মী ইউনিয়নের নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়া। তিনি বলেন, ‘‘ওদের দৌরাত্ম্যে যাত্রী দুর্ভোগ বাড়ছে, সরকারের বদনাম হচ্ছে। প্রশাসনকে ব্যবস্থা জন্য নেওয়ার আবেদন করেছি।’’ সিটু নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘শাসক পক্ষের চাপেই প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারছেনা। কষ্ট পাচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।’’ আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, ‘‘অবৈধ অটোর দাপটে বাস-শিল্প লাটে উঠেছে। এই দাপট বন্ধ না হলে আমাদেরই বাস চালানো বন্ধ করে দিতে হবে।’’

আসানসোলের মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। ২৪ সেপ্টেম্বর বৈঠক ডেকেছি। আপাতত ১২টি রুটে অটো চলাচল নির্দিষ্ট করেছি।’’ এডিসিপি (ট্রাফিক) রাকেশ সিংহ জানান, অটোর দাপট রুখতে মোটর ভেহিক্যালস দফতরের সঙ্গে যৌথ অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন