নান্দাইয়ে মোতায়েন পুলিশ এবং র্যাফ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
শাসকদলের অন্তর্কলহের জেরে কালনা ১ ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত হয়ে গেল শনিবার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে নির্বাচিত সদস্যদের এক তৃতীয়াংশ হাজির না হওয়ায় ব্লক প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নেয়। এ দিন এই ব্লকের আরও সাতটি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয়।
নান্দাই পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, এ দিন বোর্ড গঠনের জন্য সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে পঞ্চায়েতের সদস্যদের হাজির হতে বলা হয়। কয়েকজন যখন আসতে শুরু করেছেন, সেই সময়ে তাঁদের ডেকে পাঠানো হয় পঞ্চায়েত ভবন থেকে কিছুটা দূরে তৃণমূল কার্যালয়ে। সেখানে এই পঞ্চায়েত এলাকার শাসকদলের পর্যবেক্ষক রাজকুমার পাণ্ডে জানিয়ে দেন, দল ঝুমুর ঘোষকে প্রধান ও আরজেদ শেখকে উপপ্রধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নির্দেশ সকলকে মানতে হবে।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, এর পরেই ঘুঘুডাঙা এলাকা থেকে নির্বাচিত লিয়াকত শেখের অনুগামীরা বিরোধিতা শুরু করেন। দলীয় কার্যালয়ের মধ্যেই গোলমাল বেধে যায়। ভাঙচুর, ধস্তাধস্তিতে চার জন আহত হন। পঞ্চায়েত সদস্যেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। কালনার এসডিপিও শান্তনু চৌধুরী, ওসি প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের বড় বাহিনী নিয়ে পৌঁছন। র্যাফ নামানো হয়। এর পরে আর পঞ্চায়েত সদস্যেরা বোর্ড গঠনে হাজির হননি। লিয়াকতের দাবি, প্রধান ও উপপ্রধানের নাম পঞ্চায়েতের ভিতরে জানানো হলে হয়তো নির্বিঘ্নেই বোর্ড গঠন হত। তা না করায় গোলমাল বেধেছে।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, সুলতানপুর পঞ্চায়েতে রুনা মালিককে প্রধান ও গত বারের প্রধান প্রয়াত সুকুর শেখের ভাই নাসের শেখকে উপপ্রধান করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ দিন বোর্ড গঠনে সদস্যেরা ভোটাভুটি চান। তাতে প্রধান হন সীমা দাস, উপপ্রধান রেফাতুল্লা শেখ। প্রধান নির্বাচন নিয়ে ভোটাভুটি হয় সিমলন আটঘোরিয়া পঞ্চায়েতেও। প্রধান নির্বাচিত হন রুম্পা সর্দার। তবে দলের নির্দেশ অনুযায়ী উপপ্রধান হন গোপেশ্বর ঘোষ। বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতেও প্রধান পদের জন্য ভোটাভুটি হয়। তাতে জিতে প্রধান হন চম্পা কোলে। উপপ্রধান হিসাবে তিন জনের নাম ওঠার পরে লটারি করে সনাতন কোঁরাকে বেছে নেওয়া হয়। এই ব্লকের হাটকালনা, ধাত্রীগ্রাম, বেগপুর, কাঁকুরিয়া এবং পূর্বস্থলী ১ ব্লকের তিনটি ও মন্তেশরে সাতটি পঞ্চায়েতে কোনও মতান্তর ছাড়াই বোর্ড গঠন হয়েছে।
এ দিন কাটোয়া ২ ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতেও বোর্ড গঠন হয়। করুই পঞ্চায়েতে প্রথম বার ক্ষমতায় এল তৃণমূল। এত দিন সেটি ছিল সিপিএমের দখলে। এ বার প্রধান নির্বাচিত হলেন তৃণমূলের মমতা মালিক। গত পঞ্চায়েত ভোটে পলসোনা পঞ্চায়েতেও জিতেছিল সিপিএম। তবে পরে তাদের তিন সদস্যের দলবদলের জেরে বোর্ড তৃণমূলের হাতে যায়। জগদানন্দপুরের প্রধান হয়েছেন গৌতম ঘোষাল। কাটোয়া ১ ব্লকের গিধগ্রামে প্রধান বাছাই নিয়ে যে গোলমাল চলছিল, তা মিটে গিয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে। দলের নেতাদের দাবি, সেখানে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে বলে জানান মহকুমাশাসক (কাটোয়া) সৌমেন পাল।
গলসি ২ ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হয় এ দিন। গলসি, কুরকুবা, গোহগ্রাম ও খানো পঞ্চায়েতে ভোটাভুটিতে বোর্ড গঠন হলেও আদড়া, মসজিদপুর, সাঁকো, সাটিনন্দী ও ভুড়ি পঞ্চায়েতে দলের নির্দেশ মেনেই প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচন হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।
যে সমস্ত পঞ্চায়েতে দলের নির্দেশ উপেক্ষিত হয়েছে, সেখান কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, এই প্রশ্নে বিদায়ী জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুর বক্তব্য, ‘‘দলে যথেষ্ট গণতন্ত্র রয়েছে। কিছু এলাকায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের প্রধান, উপপ্রধান বেছে নিতে বলা হয়েছিল।’’