তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পরে থেকেই ভোট-তরজা শুরু হয়েছে দুর্গাপুরে। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারেও তৃণমূলের প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতার বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে দুর্গাপুর পূর্ব ও দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা এলাকায় সাংসদের দেখা মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের পাল্টা প্রচার, সাংসদ তহবিল থেকে এই এলাকায় হওয়া উন্নয়নের কাজ।
২০১৪-র লোকসভা ভোটে মমতাজ সংঘমিতা পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫২১ ভোট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিপিএমের প্রার্থী সইদুল হক পেয়েছিলেন ৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ১৯০ ভোট। ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ২০৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন বিজেপির দেবশ্রী চৌধুরি। এই ফল দেখলে তৃণমূল প্রার্থী এ বারেও সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন এমন মনে হওয়া স্বাভাবিক, মনে করছেন তৃণমূল কর্মীদেরই একাংশ। কিন্তু, ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে কাঁকসায় কিছু জায়গায় বিজেপির উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। তা ছাড়া দুর্গাপুর পুরসভার সব কটি ওয়ার্ড তৃণমূল দখল করলেও বেশ কিছু জায়গায় ভোটের দিন শহরে ‘প্রতিরোধ’-এ নামতে দেখা গিয়েছিল বিজেপিকে।
এই পরিস্থিতিতে প্রচারে ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে সব পক্ষই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির সূত্রে খবর, কর্মীদের দায়িত্ব ভাগ করে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বাড়ি বাড়ি প্রচার হোক, বা সভা-বৈঠক, সব ক্ষেত্রেই সাংসদের অনুপস্থিতির অভিযোগটি উস্কে দিতে চাইছে বিরোধীরা, জানান এলাকার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নেতা, কর্মীদের একাংশ।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিরোধীদের এই প্রচারের পাল্টাও প্রস্তুত, জানান তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। বিরোধী প্রচার ‘ভিত্তিহীন’, তা প্রমাণ করতে দলের হাতিয়ার সাংসদ তহবিল থেকে হওয়া উন্নয়নের কাজই, জানান তৃণমূল নেতা, কর্মীদের একাংশ। তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রচারে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা ‘ব্যর্থতা’ ও রাজ্য সরকারের নানা ‘সাফল্যে’র কথা বলা হবে। পাশাপাশি, সাংসদ তহবিল থেকে খরচের তথ্য নিয়েও প্রচার করা হবে। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, প্রতি বছর গড়ে দুর্গাপুর ও কাঁকসায় আট-ন’টি করে প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে সাংসদ কোটার টাকায়। রাস্তাঘাট, নিকাশি নর্দমা তৈরির পাশাপাশি, স্কুলে কম্পিউটার কিনে দেওয়া, গ্রন্থাগারে বই কিনে দেওয়া, হাসপাতাল-পঞ্চায়েতে অ্যাম্বুল্যান্স দান, যাত্রী প্রতীক্ষালয়, স্কুল ভবন তৈরি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতি ভবন এবং আদিবাসী শিল্পীদের জন্য মুক্তমঞ্চ তৈরির মতো কাজও করা হয়েছে ওই টাকায়, দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের অভিযোগ, ‘‘সাংসদ এলাকার জন্য কিছুই করেননি। এর জবাব মানুষ ভোটবাক্সেই দেবেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারেরও অভিযোগ, ‘‘পাঁচ বছরে উনি এলাকার জন্য কিছুই করেননি। শিল্পক্ষেত্রে আন্দোলন হোক বা নাগরিক পরিষেবা দেওয়া, কোথাও সাংসদকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।’’ উত্তমবাবুর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘বিরোধীরা ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। সাংসদ যে পাঁচ বছর ধরে মানুষের সঙ্গে ছিলেন, প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার প্রকল্পই তার প্রমাণ।’’ মমতাজ সংঘমিতাও বলেন, ‘‘সাংসদ তহবিলের টাকায় যতটা বেশি সম্ভব কাজ হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও দুর্গাপুরে যাই।’’