Landslide

পুনর্বাসনের সময়সীমা পার, ক্ষোভ

বারবার ধস। বিপত্তি বাড়ছে শিল্পাঞ্চলে। পুনর্বাসনের দিকে তাকিয়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার বাসিন্দা। কিন্তু এখনও শেষ হয়নি এই কাজ। ধস-পরিস্থিতি, পুনর্বাসন, কাজ শেষ না হওয়ার কারণ কী, কী বলছে সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষ— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।পুনর্বাসনের কী পরিস্থিতি, সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে জেলার বাসিন্দারা ধস-পরিস্থিতির কথা বলছেন।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share:

অণ্ডালে। ফাইল চিত্র

আচমকা ধসে যাচ্ছে ভূপৃষ্ঠ। কখনও বা আগুন, ধোঁয়ায় ভারী হচ্ছে শিল্পাঞ্চলের বাতাস। জীবন-জমি-জীবিকা, সবই বিপন্ন সর্বগ্রাসী ধসের জেরে। ভূগর্ভে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু, তা-ও ঘটছে বারবার। এই পরিস্থিতিতে আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকায় ফের সামনে এসেছে পুরনো, অথচ নিত্য-চর্চিত পুনর্বাসনের বিষয়টি। পাশাপাশি, ২০১৯-এর মধ্যে পুনর্বাসন দেওয়ার কথা থাকলেও, এখনও তা না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে এলাকায়।

Advertisement

পুনর্বাসনের কী পরিস্থিতি, সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে জেলার বাসিন্দারা ধস-পরিস্থিতির কথা বলছেন। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭-এর ১৩ জুন ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব মাইনস সেফটি’ (ডিজিএমএস) ১৪৬টি এলাকাকে ‘ধস কবলিত’ বলে ঘোষণা করে। এর মধ্যে ১৩৯টি এলাকা ঘন জনবসতিপূর্ণ। ডিজিএমএস প্রস্তাব দেয়, এই সব এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিয়ে নিরাপদ জায়গায় সরাতে হবে। অন্য সাতটি এলাকায় থাকা সড়ক, রেললাইন ও তেলের পাইপলাইনের দিক পরিবর্তন করতে হবে। ডিজিএমএস-এর ওই রিপোর্ট প্রকাশের মাসখানেক বাদে ধস কবলিত অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য পুনর্বাসন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন সিপিএমর প্রাক্তন সাংসদ তথা শ্রমিক নেতা হারাধন রায়।

ওই মামলার প্রেক্ষিতেই ১৯৯৯-এ পুনর্বাসন সংক্রান্ত একটি ‘মাস্টার প্ল্যান’ আদালতে জমা করে ইসিএল। কিন্তু হারাধনবাবুর আপত্তিতে ইসিএল কর্তৃপক্ষ ফের ওই প্ল্যানের পরিমার্জন করে ২০০৩-এর ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে জমা করে। কিন্তু ফের আপত্তি ওঠে। এ বার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দেশের সলিসিটর জেনারেলকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অবশেষে সলিসিটর জেনারেলের হস্তক্ষেপে ফের মাস্টার প্ল্যান তৈরি হয় ২০০৬-এ। ওই বছরের অগস্টে তা সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়। প্ল্যানটি ২০০৯-এ কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট অনুমোদন করে। সেটি রূপায়ণের জন্য কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রক ২,৬২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করে।

Advertisement

মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ইসিএল-এর আবাসন এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরাবে সংস্থা। ব্যক্তিগত এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরাবে রাজ্য সরকার। পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত জমির খোঁজ এবং আবাসন, শহরতলি তৈরির দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। আর্থিক অনুদান দেবে কয়লা মন্ত্রক। রাজ্য সরকার কাজটির দেখভালের দায়িত্ব দেয় আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদকে (এডিডিএ)। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ১৩৯টি এলাকার প্রায় ৮৬৩ হেক্টর জমি ‘প্রভাবিত’। পুনর্বাসন দিতে হবে প্রায় ৪৫ হাজার পরিবারের ১ লক্ষ ৮০ হাজার বাসিন্দাকে। পাশাপাশি, যেখানে পুনর্বাসন দিতে হবে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাজার, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদি তৈরি করে দিতে হবে। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, বরাদ্দ অর্থ অনুমোদনের পরে দু’টি পর্যায়ে দশ বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। ফলে, ২০১৯-এর মধ্যে সেই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা এখনও শেষ হয়নি।

এ দিকে, ধস-পরিস্থিতি দিনে দিনে বিপজ্জনক জায়গায় যাচ্ছে বলে জেলার বাসিন্দারা জানান। যেমন, গত ২০ জুন অণ্ডালের জামবাদে বাড়ি-সহ ভূগর্ভে তলিয়ে যান এক মহিলা। ২০১২-য় অণ্ডালেরই পরাশকোলে খাদে তলিয়ে যান দুই শিশু-সহ একই পরিবারের চারজন। ২০১৩ সালে ডিসেরগড়ের শিশুবাগানে একই ঘটনায় তলিয়ে যান এক কিশোরী। এ পর্যন্ত ধসের জেড়ে কয়েক হাজার বাড়িতে বিপজ্জনক ফাটল ধরেছে। বসবাসের অনুপযুক্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। মাটিতে মিশেছে কয়েকশো বাড়ি।

এই পরিস্থিতিতে কেন পুনর্বাসনের কাজ শেষ করা গেল না, কী বলছে প্রশাসন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা, সে সব প্রশ্ন নিয়েই চর্চা রয়েছে এলাকায়। আর এ সব প্রশ্নের মধ্যেই জেলার ডিসেরগড়ের বিমান মুখোপাধ্যায়, সাঁকতোড়িয়ার ইশাক খান, সালানপুরের কেশব কর্মকারদের মতো বাসিন্দারা বলেন, ‘‘পুনর্বাসন পাওয়ার আশায় রয়েছি। কিন্তু যত দিন তা না পাচ্ছি, তত দিন এই ধস, আগুন, ধোঁয়ার মধ্যেই ঘুরপাক খাবে জীবন, জীবিকা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন