ডিটিপিএস-এর চিমনির ধোঁয়া। —নিজস্ব চিত্র।
শুধু রাজ্য সরকারের তাপবিদ্যুৎ সংস্থা ডিপিএল নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশনের (ডিটিপিএস) বিরুদ্ধেও লাগাতার দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ উঠছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে একাধিক স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন শহরবাসী। ইতিমধ্যেই সংস্থাটিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে।
পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিটিপিএসের বিরুদ্ধে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ বহুদিনের। ষাটের দশকে ৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ইউনিট নিয়ে যাত্রা শুরু সংস্থার। পরে ১৯৬৬ সালে ১৪০ মেগাওয়াট এবং ১৯৮২ সালে ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ইউনিট চালু হয়। ১৯৮৫ সালে আগুন লেগে প্রথম দুটি ইউনিট বসে যায়। এর আগেও ওই সংস্থার বিরুদ্ধে জল, বায়ু ও ছাইয়ের দূষণ নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠেছে। একাধিক বার সতর্ক করেও কাজ না হওয়ায় ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ডিটিপিএস কর্তৃপক্ষকে আর্থিক জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় পর্ষদ। এ বারও প্রয়োজন হলে তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন পর্ষদের এক আধিকারিক। তিনি আরও জানান, দূষণ নিয়ে ন্যাশানাল গ্রিন ট্রাইবুন্যাল (এনজিটি)-এর মনোভাব খুবই স্পষ্ট। কোনও ভাবেই তা অমান্য করা যাবে না। যদি ইতিবাচক পদক্ষেপ সংস্থা না নেয় তাহলে চরম ব্যবস্থা হিসাবে প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হতে পারে ভবিষ্যতে।
শহরবাসীরও অভিযোগ, ক্রমাগত দূষণে দিনের পর দিন বাড়ছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। চিকিৎসকেরাও জানিয়েছেন, বাতাসে ভাসমান অতি ক্ষুদ্র বিপজ্জনক কণিকা শ্বাসনালী হয়ে ফুসফুসে ঢোকে। ফলে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে, সংক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হয়। অনেক সময় অল্প বয়সেই হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ দেখা দেয়। পরে এ থেকে ক্যানসারও দেখা দিতে পারে বলে চিকিৎসকদের দাবি। একাধিক চিকিৎসকের বক্তব্য, এ কারণেই দুর্গাপুর শহরে ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ বা সিওপিডি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে চোখের অসুখও। বিশেষজ্ঞরাও জানান, কারখানার বর্জ্য মেশানো জলেও অনেক ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক রাসায়নিক মিশে থাকে। শোধনের পরেও তা পুরোপুরি বিশুদ্ধ হয় না। সেই জল পান করে যকৃৎ ও কিডনির নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলেও চিকিৎসকদের ধারণা।
শহরের অভিজাত এলাকা সিটি সেন্টারের অদূরেই রয়েছে রাজ্য সরকারের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ডিপিএল। দূষণ ছড়ানোর অভিযোগে ইতিমধ্যেই পর্ষদের কাঠগড়ায় উঠেছে সংস্থাটি। এ বার একই ভাবে সিটি সেন্টার থেকে মাত্র ছ’কিমি দূরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন’-এর তাপবিদু্ৎ কেন্দ্র ডিটিপিএসের বিরুদ্ধেও দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ নিয়ে কড়া মনোভাব দেখাল দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদ। পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই ওই সংস্থাকে সতর্ক করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দূষণ রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। দূষণ রোধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এ বার চিঠির ভাষা আগের থেকে কড়া মনে হচ্ছে।’’ সংস্থার মুখ্য বাস্তুকার মহেশচন্দ্র মিশ্র অবশ্য এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। তিনি জানান, নতুন কাজে যোগ দিয়েছেন তিনি। সংস্থার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক কোনও ধারণা এখনও গড়ে ওঠেনি। তিনি বলেন, ‘‘আমি বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দিয়েছি। আগে পরিস্থিতি পুরো বুঝে নিতে হবে। তার পরেই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব।’’