প্রশ্নে পুনর্বাসন (১)

আট বছরে প্রাপ্তি শুধু পরিচয়পত্র

এই খনি এলাকায় প্রায় ১৪১টি ধস কবলিত অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সব এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিয়ে অন্যত্র সরানোর দাবিতে ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ হারাধন রায়।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ১৪:০০
Share:

ধসের জেরে ঘরে ফাটল। ফাইল চিত্র

মাটির তলায় চাপ বেঁধে রয়েছে অন্ধকার গহ্বর। কখনও তা ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে ধোঁয়া। কখনও আবার ধস নেমে তলিয়ে যায় জমি, বাড়ি। জ্বলন্ত ভূগর্ভে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কোথাও নতুন খনির কাজ শুরু হলেই তাই এখন সিঁদুরে মেঘ দেখেন আশপাশের বাসিন্দারা। ওঠে পুনর্বাসনের দাবি। যে দাবি বহু বছর ধরেই উঠছে আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি শিল্পাঞ্চলে। ধস কবলিত এলাকা চিহ্নিত করে নানা পরিকল্পনাও হয়েছে। কিন্তু এখনও তার কোনও সুফল পাননি বাসিন্দারা।

Advertisement

এই খনি এলাকায় প্রায় ১৪১টি ধস কবলিত অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সব এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দিয়ে অন্যত্র সরানোর দাবিতে ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ হারাধন রায়। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে পুনর্বাসন সংক্রান্ত একাধিক বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে কয়লা মন্ত্রক।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ২০০৩ সালে প্রথম একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে ইসিএল। কিন্তু সেটি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নানা আপত্তি ওঠায় ২০০৬ সালে পুনর্মাজিত দ্বিতীয় মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। কয়লা মন্ত্রক সেটি গ্রহণ করে ও পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য ২৬২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। ২০০৯ সালের জুনে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট অর্থ অনুমোদন করে। ঠিক হয়, পরের দশ বছরে দু’টি পর্যায়ে এই টাকায় ধস এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। কিন্তু তার পরে প্রায় আট বছর কেটে গেলেও কাজ এগোয়নি। মাস দুয়েক আগে নতুন জেলা ঘোষণার সভা করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আর দেরি করা যাবে না। তলিয়ে যাওয়া থেকে বাসিন্দাদের রক্ষা করতে হবে।’’

Advertisement

কোথায় আটকে রয়েছে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া? ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা মন্ত্রকের নির্দেশে পুনর্বাসনের যাবতীয় খরচ বহন করবে ইসিএল। তবে সে জন্য জমি খোঁজা থেকে আবাসন তৈরি ও আধুনিক শহর গড়ার কাজের পুরোটাই করবে রাজ্য সরকার। প্রয়োজনে ইসিএলের তরফে কারিগরি সহায়তা করা হবে। প্রাথমিক ভাবে রাজ্যের তরফে এই কাজের দায়িত্ব পড়ে এডিডিএ-র উপরে। কিন্তু সম্প্রতি সরকার সিদ্ধান্ত বদল করে এডিডিএ-র বদলে সেই দায়িত্ব দিয়েছে আবাসন দফতরকে।

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ১৪১টি ধস কবলিত এলাকার মধ্যে ১২৬টি অঞ্চলের ডেমোগ্রাফিক সার্ভে করিয়ে বাসিন্দাদের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। দু’টি অঞ্চলের বাসিন্দারা পুনর্বাসনের বিরোধিতা করায় সেখানে এই কাজ করা যায়নি। দশটি অঞ্চলে কোনও বাসিন্দা এখন থাকেন না। তিনটি অঞ্চল ইসিএল অধ্যুষিত হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের আগেই সরানোর ব্যবস্থা করেছেন খনি কর্তৃপক্ষ।

গোটা প্রক্রিয়া এখনও থমকে রয়েছে এই জায়গাতেই।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন