Sand Mining

Sand mining: পাথর-কারবারে প্রভাব পড়বে কি, চর্চা জেলায়

অবৈধ পাথর খাদানের ‘রমরমার’ ফলে প্রায়ই রাস্তা ও বনাঞ্চল নষ্ট, পরিবেশ দূষণের মতো নানা সমস্যার অভিযোগ করেন বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২১ ০৬:২০
Share:

ফাইল চিত্র।

বালি-পাথর তোলার দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষমতা মাইন এবং মিনারেল কর্পোরেশনের হাতে চলে যাবে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ, কে বা কোন সংস্থা বালি-পাথর তুলবে, তার ‘নিলাম’ হবে অনলাইনে। কিন্তু তাতেও পাথর ‘চুরিতে’ লাগাম পড়বে না বলেই দাবি জেলার বিরোধী দলগুলির। যদিও, তৃণমূলের আশা, এর ফলে বন্ধ হবে ‘অনিয়ম’।

Advertisement

এত দিন, এই দায়িত্ব ছিল ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের হাতে। এ বার থেকে তা চলে যাচ্ছে সরকারের খনি ও খনিজ সম্পদ দফতরের হাতে। তবে শনিবার রাজ্যের চিফ মাইনিং অফিসার জয়দেব দাস বলেন, ‘‘এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশিকা আমরা হাতে পাইনি। তা পেলে অবশ্যই সে অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’ জয়দেববাবু জানান, পশ্চিম বর্ধমানে এই মুহূর্তে চারটি পাথর খাদান রয়েছে। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খাদানগুলি থেকে সরকারের ঘরে নিয়মিত রাজস্ব (বছরে মোট ১৬ লক্ষ টাকা) জমা পড়ে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৈধ পাথর ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ‘‘এই মুহূর্তে জেলার সালানপুর ও বারাবনি ব্লকে ১৫টিরও বেশি অবৈধ পাথর খাদান রয়েছে।’’ প্রাক্তন এক ভূমি আধিকারিক জানান, বারাবনির কাশকুলি, বড়পুকুরি, রঘুনাথচটি, সালানপুরের উত্তরামপুর-জিৎপুর, কল্যাণেশ্বরী-সহ দুই ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে এই ‘অবৈধ’ খাদানগুলি। এগুলি থেকে নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত কালো পাথর তোলা হয়। এই পাথর ট্রাক, ট্রাক্টর ও ডাম্পারে করে জেলার নানা প্রান্তে থাকা পাথরকলে ‘পাচার’ করা হয় বলে সূত্রের দাবি। এ ছাড়া, সালানপুরের দেন্দুয়া পঞ্চায়েতের মাইথন, বাথানবাড়ি, হদলা, সিদাবাড়িতে অবৈধ ভাবে কোয়াৎর্জ বা সাদা পাথর তুলে ‘পাচারের’ অভিযোগও উঠেছে সম্প্রতি। বিশেষ সূত্রে জানা গেল, দু’শো ঘনফুট বৈধ কালো পাথরের দর, তিন হাজার টাকা। একই পরিমাণ অবৈধ পাথরের দর, ২,৪০০ টাকা।

Advertisement

এত দিন পর্যন্ত কী ভাবে বৈধ পাথর খাদান খোলা যেত? ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর জানায়, যিনি বা যে সংস্থা কর্তৃপক্ষ খাদান খুলবেন, তাঁদের নিজস্ব জমি থাকতে হবে। খাদান খোলার আগে প্রথমে পঞ্চায়েত বা পুরসভার থেকে ‘নো-অবজেকশন’ শংসাপত্র নিতে হবে। তার পরে, খাদান খোলার অনুমতি চেয়ে পরিবেশ দফতরের ‘নো-অবজেকশন’ নিতে হবে। এর পরে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে সে জমির চরিত্র বদল করতে হবে। জমির খাজনা মেটানো হয়েছে কি না এবং জমির মালিকানা ঠিক আছে কি না, এ সংক্রান্ত শংসাপত্র নিতে হয়। এক জন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে খাদানের বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করিয়ে সে রিপোর্ট-সহ যাবতীয় শংসাপত্র রাজ্যের চিফ মাইনিং অফিসারের দফতরে জমা করতে হয়। চিফ মাইনিং অফিসারের দফতর বিশেষজ্ঞদের দিয়ে খাদানের জমির ভূগর্ভে কতটা সম্পদ আছে, তা পরিমাপ করে খাদান খোলার অনুমতি দেয়।

কিন্তু অভিযোগ, এ সব নিয়ম-নীতিকে কার্যত ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়েই কারবার চালান ‘পাথর-মাফিয়া’রা। ‘স্থানীয় ব্যবস্থা’র ভিত্তিতে তাঁরা অবৈধ খাদান খুঁড়ে পাথর কেনা-বেচার কারবার ফেঁদে বসেন। জেলার পরিচিত এমন কয়েকজন কারবারির কথায়, ‘‘নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের কোনও লেনদেন নেই।’’ এ দিকে, দীপক মাজি নামে একজন বৈধ পাথর ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘নতুন নিয়মে আমাদের কোনও সমস্যা হবে না। বরং, গোটা বিষয়টি আরও স্বচ্ছ হল।’’

অবৈধ পাথর খাদানের ‘রমরমার’ ফলে প্রায়ই রাস্তা ও বনাঞ্চল নষ্ট, পরিবেশ দূষণের মতো নানা সমস্যার অভিযোগ করেন বাসিন্দারা। আসানসোল পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নীল কারখানা লাগোয়া এলাকা-সহ বিভিন্ন জায়গায় এ সব সমস্যা রয়েছে। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের কাছে এই সমস্যাগুলির কথা জানিয়ে পদক্ষেপ করারও আর্জি জানিয়েছিলেন বারাবনির পাঁচগাছিয়া, বড়পুকুরির বাসিন্দাদের একাংশ।

রাজ্য নতুন নীতি ঘোষণার পরে, সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর অবশ্য দাবি, ‘‘এ সব লোকদেখানো বিষয়। আদতে গোটা অবৈধ কারবারটাই চলে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের মদতে।’’ বিজেপির জেলা আহ্বায়ক শিবরাম বর্মন বলেন, ‘‘পাথর-মাফিয়াদের বিরুদ্ধে যতদিন না কড়া পুলিশি পদক্ষেপ হচ্ছে, ততদিন এ সব নিয়ম করে কিছু হবে না।’’ যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক অভিজিৎ ঘটক বলেন, ‘‘বিরোধীরা যা বলছেন, বলুন। এই নতুন নিয়মে রাজ্যের ভাল হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন